হাইব্রিড মরিচের জাত এটি একটি উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী। একারণে আমাদের দেশে এর প্রচলন দিন দিন বেড়ে চলেছে।
হাইব্রিড মরিচ চাষ
হাইব্রিড মরিচ চাষে বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মরিচের বিভিন্ন জাতের মধ্যে হাইব্রিড মরিচের চাষ বেশ জনপ্রিয়। হাইব্রিড মরিচের কিছু সুবিধা হলো:
* **ফলন বেশি হয়।**
* **ফলের গুণগত মান ভালো হয়।**
* **রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।**
* **বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।**
**হাইব্রিড মরিচ চাষের জন্য জমি নির্বাচন**
হাইব্রিড মরিচ চাষের জন্য উঁচু, সুনিষ্কাশিত ও বেলে দোআঁশ মাটি ভালো। মাটির pH ৫.৫-৬.০ এর মধ্যে হলে ভালো হয়।
**বীজ বপন**
হাইব্রিড মরিচের বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস। বীজতলা তৈরির ১০-১২ দিন আগে জমি তৈরি করে নিতে হবে। জমি ভালোভাবে চাষ করে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে গোবর সার, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজতলা তৈরির জন্য ৫০x৫০x৩০ সেমি আকারের বেড তৈরি করতে হবে। বেডের মাঝখানে সার সারি করে ছিটিয়ে দিতে হবে। তারপর বীজ সারির উপর ছিটিয়ে দিয়ে হালকা করে মাটি চাপিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের পর জমি ভালোভাবে সেচ দিতে হবে।
**চারা রোপণ**
বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের জন্য ৫০x৫০ সেমি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের মাঝখানে চারা লাগিয়ে ভালোভাবে মাটি চাপিয়ে দিতে হবে। রোপণের পর সেচ দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
হাইব্রিড মরিচ গাছের ভালো ফলন পেতে হলে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা জরুরি। হাইব্রিড মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে নিম্নলিখিত পরিমাণ সার প্রয়োগ করা হয়:
* **গোবর:** ১০ টন
* **ইউরিয়া:** ২৫০ কেজি
* **টিএসপি:** ২০০ কেজি
* **এমওপি:** ১৫০ কেজি
সার প্রয়োগের সময়সূচি:
* **জমি তৈরির সময়:** গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
* **চারা রোপণের ২৫ দিন পর:** ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
* **চারা রোপণের ৫০ দিন পর:** ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
* **চারা রোপণের ৭০ দিন পর:** ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগের উপায়:
* **গোবর সার:** জমি তৈরির সময় গোবর সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
* **রাসায়নিক সার:** রাসায়নিক সার ছিটিয়ে দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ
হাইব্রিড মরিচ গাছের ভালো ফলন পেতে হলে নিয়মিত সেচ দেওয়া জরুরি। তবে বৃষ্টির সময় সেচের পরিমাণ কমাতে হবে।
আগাছা দমন
আগাছা পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আশ্রয়স্থল। তাই ক্ষেতের আগাছা দমন করা জরুরি। আগাছা দমনের জন্য নিড়ানি বা হার্বিসাইড ব্যবহার করা যেতে পারে।
**হাইব্রিড মরিচ চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন**
হাইব্রিড মরিচ গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। তাই পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
* **পোকামাকড় ও রোগবালাই প্রতিরোধী জাতের মরিচ চাষ করা।**
* **সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করা।**
* **জমি ভালোভাবে চাষ করে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।**
* **অতিরিক্ত সেচ না দেওয়া।**
* **আগাছা দমন করা।**
* **পচা ফল ও পাতা জমি থেকে অপসারণ করা।**
* **সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।**
পোকামাকড় দমনের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
* **হাত দিয়ে পোকামাকড় সংগ্রহ করা।**
* **প্রয়োজনে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা।**
* **প্রয়োজনে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা।*
* **রোগের প্রতিরোধী জাতের মরিচ চাষ করা।**
* **সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করা।**
* **জমি ভালোভাবে চাষ করে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।**
* **অতিরিক্ত সেচ না দেওয়া।**
* **আগাছা দমন করা।**
* **পচা ফল ও পাতা জমি থেকে অপসারণ করা।**
* **সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।**
**রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।**
হাইব্রিড মরিচের ফল সংগ্রহ
হাইব্রিড মরিচের ফল পাকার সময় হলো ৪৫-৬০ দিন। ফল পরিপক্ক হলে হালকা লাল হয়ে যায়। ফল পাকার পর তাৎক্ষণিকভাবে সংগ্রহ করতে হবে। ফল সংগ্রহের পর ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করতে হবে।
হাইব্রিড মরিচের ফলন
হাইব্রিড মরিচের ফলন জাতের উপর নির্ভর করে। তবে প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫-৬ টন ফলন পাওয়া যায়।
হাইব্রিড মরিচ চাষে লাভ
হাইব্রিড মরিচ চাষে খরচ তুলে ফেলা যায় ৪-৫ মাসের মধ্যে। হাইব্রিড মরিচের বাজারমূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা ভালো লাভ করতে পারেন।
হাইব্রিড মরিচ চাষে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
* **হাইব্রিড মরিচ চাষে সঠিক জাত নির্বাচন করা জরুরি।**
* **সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করতে হবে।**
* **জমি ভালোভাবে চাষ করে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।**
* **অতিরিক্ত সেচ না দেওয়া।**
* **আগাছা দমন করতে হবে।**
* **সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।**
* **পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।**
এই টিপসগুলো অনুসরণ করে হাইব্রিড মরিচ চাষে ভালো ফলন ও লাভ অর্জন করা সম্ভব।
হাইব্রিড মরিচের জাত
মরিচ একটি জনপ্রিয় মসলাজাতীয় ফসল। বাংলাদেশে মরিচ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মরিচের বিভিন্ন জাতের মধ্যে হাইব্রিড মরিচের চাষ বেশ জনপ্রিয়। হাইব্রিড মরিচের কিছু সুবিধা হলো:
- ফলন বেশি হয়।
- ফলের গুণগত মান ভালো হয়।
- রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
- বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।
হাইব্রিড মরিচের জাত নির্বাচনের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:
- ফলনের পরিমাণ: হাইব্রিড মরিচের জাত নির্বাচনের সময় প্রথমেই ফলনের পরিমাণ বিবেচনা করতে হবে। যে জাতের মরিচের ফলন বেশি হয় সে জাত নির্বাচন করা উচিত।
- ফলের গুণগত মান: হাইব্রিড মরিচের জাত নির্বাচনের সময় ফলের গুণগত মানও বিবেচনা করতে হবে। যে জাতের মরিচের ফলের আকার, রঙ, ঝালের মাত্রা ইত্যাদি ভালো হয় সে জাত নির্বাচন করা উচিত।
- রোগ ও পোকামাকড়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা: হাইব্রিড মরিচের জাত নির্বাচনের সময় রোগ ও পোকামাকড়ের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বিবেচনা করতে হবে। যে জাতের মরিচ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় সে জাত নির্বাচন করা উচিত।
- বাংলাদেশে চাষের জন্য বেশ কিছু জনপ্রিয় হাইব্রিড মরিচের জাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বিজলি প্লাস:
- এটি একটি উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী হাইব্রিড মরিচের জাত। এটি সবুজ মরিচের একটি জাত। এই জাতের মরিচের ফল ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে পাকে। ফলের আকার লম্বায় ৮-১০ সেমি এবং প্রস্থে ৩-৪ সেমি। ফলের রঙ সবুজ এবং ঝালের মাত্রা মাঝারি। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ২.৫-২.৭৫ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
- ঝিলিক: এটি একটি উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী হাইব্রিড মরিচের জাত। এটি সবুজ মরিচের একটি জাত। এই জাতের মরিচের ফল ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে পাকে। ফলের আকার লম্বায় ৮-১০ সেমি এবং প্রস্থে ৩-৪ সেমি। ফলের রঙ সবুজ এবং ঝালের মাত্রা বেশি। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ২.৭৫-৩.০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
- বিজয়: এটি একটি উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী হাইব্রিড মরিচের জাত। এটি লাল মরিচের একটি জাত। এই জাতের মরিচের ফল ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে পাকে। ফলের আকার লম্বায় ৭-৮ সেমি এবং প্রস্থে ৩-৪ সেমি। ফলের রঙ লাল এবং ঝালের মাত্রা মাঝারি। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ২.৫-২.৭৫ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
- মধুমতি: এটি একটি উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী হাইব্রিড মরিচের জাত। এটি লাল মরিচের একটি জাত। এই জাতের মরিচের ফল ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে পাকে। ফলের আকার লম্বায় ৭-৮ সেমি এবং প্রস্থে ৩-৪ সেমি। ফলের রঙ লাল এবং ঝালের মাত্রা বেশি। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ২.৭৫-৩.০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
- নাগাফায়ার :মরিচ একটি উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী হাইব্রিড মরিচের জাত। এটি সবুজ মরিচের একটি জাত। এই জাতের মরিচের ফল ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে পাকে। ফলের আকার লম্বায় ৮-১০ সেমি এবং প্রস্থে ৩-৪ সেমি। ফলের রঙ সবুজ এবং ঝালের মাত্রা মাঝারি। প্রতি গাছ থেকে গড়ে ৩-৪ কেজি ফলন পাওয়া যায়।
- ধুমকেতু: ধুমকেতু মরিচ একটি দেশীয় জাতের মরিচ। এটি সবুজ ও লাল দুই রঙের হয়। সবুজ মরিচের ফল ঝালের মাত্রা কম এবং লাল মরিচের ফলের ঝালের মাত্রা বেশি। ধুমকেতু মরিচের ফল ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে পাকে। ফলের আকার লম্বায় ৭-৮ সেমি এবং প্রস্থে ৩-৪ সেমি।
এছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক হাইব্রিড মরিচের জাত রয়েছে। চাষিরা তাদের চাহিদা ও এলাকার আবহাওয়া অনুযায়ী জাত নির্বাচন করতে পারেন।
4 Comments
mario · January 18, 2024 at 1:20 am
Your commitment to quality really stands out. ❤️
akash · January 18, 2024 at 2:29 am
Thanks for your compliment. ❤️
হাইব্রিড মরিচের জাত - Infoseba · January 27, 2024 at 3:08 am
[…] আজকে আপনাদের জানিয়ে দিবো হাইব্রিড মরিচের জাত গুলো কখন করবেন কতটুকু জমি কতটুকু প্রয়োজন জাতগুলোর ফলন কেমন হয় এবং জাতগুলোর বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি তার আগে একটা রিকোয়েস্ট এই সাইটে নতুন নতুন প্রতিবেদন সবার আগে পেতে সাইটটি সেভ দিয়ে রাখুন একটি শেয়ার দিয়ে রাখুন যেন নতুন নতুন প্রতিবেদন তৈরি করতে উৎসাহ পায় বন্ধুরা চলুন।https://infoseba.com/%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%a1-%e0%a6… […]
কাঁচা মরিচ - Infoseba · July 25, 2024 at 6:53 pm
[…] আরো পড়ুন:-হাইব্রিড মরিচ চাষ […]