মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি এটি একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগের কারনে মরিচের গাছ নষ্ট হয়ে যায় ফলন অনেকাংশে কমে যায়।তাই এর প্রতিকার সম্পর্কে জানা অতিব জরুরি।
মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ
ফসল : মরিচ
মরিচের সাদা মাছি
পোকার স্থানীয় নাম : নেই
পোকা চেনার উপায় : খুব ছোট হলুদাভ সাদা, নরম দেহ বিশিষ্ট।
ক্ষতির ধরণ : গাছের রস চুষে খাওয়ার ফলে গাছ শুকিয়ে যায়। এই পোকা এক ধরণের রস ছড়িয়ে দেয়,যেখানে বিভিন্ন ছত্রাক আক্রমণ করে। ফলে দূর থেকে আক্রান্ত গাছকে নিস্তেজ ও কালো দেখায়। গাছের বৃদ্ধি খুবই কম হয়।
আক্রমণের পর্যায় : বাড়ন্ত পর্যায়
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : সব
পোকার যেসব স্তর ক্ষতি করে : পূর্ণ বয়স্ক , নিম্ফ
ব্যবস্থাপনা : আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক গেইন ২০ এসএল ও এবোম ১.৮ ইসি ১ মিলি হারে ১ লিটার পানিতে শিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
পূর্ব-প্রস্তুতি : আগের ফসলের নাড়া বা অবশিষ্ট অংশ ভালভাবে ধ্বংস করা । আগাছা, মরা পাতা ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষন করতে হবে।
মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ
হয় লাল মাকড়ের আক্রমণে
এই লাল মাকড় পোকার আক্রমণে মরিচের পাতা কুঁকড়ে যায়। এই লাল মাকড় মরিচের পাতার রস চুষে খায়। এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের ফলন পূর্বের তুলনায় প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ হ্রাস পায়।
মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ লক্ষণ লাল মাকড়ের আক্রমণে হয়।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের আক্রান্ত পাতার নিচের দিকে উলটানো নৌকার মতো হয়ে যায়।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের পাতা কুঁকড়ে এবং শুকিয়ে যায়।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের পাতা ও ফুলের কলি ঝড়ে পরে যায়।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচ ফলের আকৃতি ছোট হয়ে যায় এবং মরিচ গাছের ফলের ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
লাল মাকড় দমন ব্যবস্থা
লাল মাকড় দমণে সালফার জাতীয় কীটনাশক ১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম মিশিয়ে সকালে বা বিকালে সূর্য ডোবার পর স্প্রে করতে হবে এবং এবাবে ১০ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণ বেশি হলে মাকড়নাশক ওবেরন ২৮০ এসসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি পরিমাণে মিশিয়ে মরিচের পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। যদি লাল মাকড়ের সাথে অন্য পোকার আক্রমণ দেখা যায় তাহলে প্রথমে মাকড়নাশক ব্যবহার করে তারপরে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার মূল কারণ হলো মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ।
এই রোগ বিভিন্ন মাধ্যমে হয়। তাই চলুন মরিচের পাতা কেঁকড়ানো রোগ সম্পর্কে জেনে আসি।
মূলত পোকা-মাকড়ের আক্রমণের কারণে মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগে হয়ে থাকে। সাধারণত কয়েক ধরণের মাকড়ের আক্রমণে মরিচ গাছে মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগ হয়। যেমনঃ থ্রিপস পোকা, লাল মাকড়, এফিড বা জাব পোকা এবং সাদা মাছি।
এছাড়াও মরিচ গাছ মাটি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন এবং পুষ্টি না পেলে মাটি থেকে পুষ্টি যোগাতে শিকড়ের অক্ষমতার কারণে অতিরিক্ত জল খেয়ে ফলে, যার কারণে মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ হয়। তাই আসুন জেনে আসি মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগের কারন, লক্ষণ ও সহজ সমাধান বা প্রতিকার সম্পর্কে।
মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ হয় থ্রিপস পোকার আক্রমণে
এই থ্রিপস পোকার আক্রমণে মরিচের পাতা কুঁকড়ে যায়। এই থ্রিপস পোকা মরিচ গাছের কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে ফলে। যার কারণে মরিচের পাতা উপরের দিকে কুঁকড়ে যায় এবং মরিচ গাছ দূর্বল হয়ে যায়।
থ্রিপস পোকার আক্রমণে মরিচের পাতা কোঁকড়ানোর লক্ষণ
মরিচ গাছের পাতার মধ্যশিরার আশেপাশে বাদামী রঙ হয়ে যায় ও পাতা শুকিয়ে যায়।
পাতার নিচের পিঠে অনেক ক্ষতি হওয়ার কারণে পাতা নৌকার খোলের মতো করে পাতা উপরের দিকে কুঁকড়ে যায়। পোকায় আক্রান্ত পাতা দেখতে খুবই বিকৃত দেখায়।
থ্রিপস পোকা দমন ব্যবস্থাপনা
যদি মরিচ গাছে কুঁকড়ানো পাতার পরিমাণ কম হয় তাহলে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে এবং ক্ষেত পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
আক্রান্ত মরিচ গাছে এবং গাছের পাতায় ভালো করে পরিষ্কার পানি স্প্রে করতে হবে।
প্রাকৃতিকভাবে ফসল সুরক্ষায় ব্যবহৃত হলুদ স্টিক ট্র্যাপ ব্যবহার করে পোকা দমন করা যেতে পারে।
পোকানাশক হিসেবে ১ কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ নিয়ে ২০ লিটার পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি ছেঁকে নিয়ে পাতার উপরের দিকে স্প্রে করতে হবে।
যদি থ্রিপস পোকার আক্রমণ বেশি হয় বা পাতা বেশি কুঁকড়ে যায় তাহলে ফিপ্রোনিল (রিজেন্ট/এসেন্ড/গুলি/অন্য নামের) বা ডাইমেথয়েট (বিস্টারথোয়েট/টাফগর/অন্য নামে) ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি হারে বা সাকসেস ১০ লিটার পানিতে ১২ মিলি হারে ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
যদি থিপ্রস পোকা বেশি দেখা দেয় গেইন ২০ এসএল ও এবোম ১.৮ ইসি ১ মিলি হারে ১ লিটার পানিতে শিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এই থিপ্রস পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মরিচ গাছের চারা রোপনের ৩০ দিনের মধ্যে তিন বার করে অর্থাৎ ১০ দিন পর পর প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি গেইন ২০ এসএল ও এবোম ১.৮ ইসি ঔষধ মিশিয়ে প্রতি ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের পাতা কোকড়ানো রোগ হয়
এই লাল মাকড় পোকার আক্রমণে মরিচের পাতা কুঁকড়ে যায়। এই লাল মাকড় মরিচের পাতার রস চুষে খায়। এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের ফলন পূর্বের তুলনায় প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ হ্রাস পায়।
লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের পাতা কোঁকড়ানোর লক্ষণ
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের আক্রান্ত পাতার নিচের দিকে উলটানো নৌকার মতো হয়ে যায়।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের পাতা কুঁকড়ে এবং শুকিয়ে যায়।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচের পাতা ও ফুলের কলি ঝড়ে পরে যায়।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণে মরিচ ফলের আকৃতি ছোট হয়ে যায় এবং মরিচ গাছের ফলের ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
লাল মাকড় দমন ব্যবস্থা
লাল মাকড় দমণে সালফার জাতীয় কীটনাশক ১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম মিশিয়ে সকালে বা বিকালে সূর্য ডোবার পর স্প্রে করতে হবে এবং এবাবে ১০ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধিতে পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।
এই লাল মাকড়ের আক্রমণ বেশি হলে মাকড়নাশক ওবেরন ২৮০ এসসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি পরিমাণে মিশিয়ে মরিচের পাতা ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। যদি লাল মাকড়ের সাথে অন্য পোকার আক্রমণ দেখা যায় তাহলে প্রথমে মাকড়নাশক ব্যবহার করে তারপরে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
মরিচ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি ১৫ দিন পর পর প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে বিকেলের শেষ দিকে প্রয়োগ করতে হবে।
পরিশেষে আমাদের সর্বপরি খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে এই কষ্ট করে ফসল তৈরী করার পর যাতে কোন অবহেলার কারণে ফসলটি নষ্ট না হয়ে যাই।অধিকাংশ সময় কৃষকের লসের সম্মুখীন হতে হয় শুধু সঠিক ভাবে আবাদ পর্যালোচনা না করার জন্য।
ধন্যবাদ সবাই আমাদের সাথে থাকার জন্য। আমরা আপনাদের পাশে সব সময় আছি থাকবো। আপনাদের কোন সমস্যা আমাদেরকে জানান কমেন্টের মাধ্যমে।
আরো পড়ুন:- সবজি চাষের সময়
0 Comments