শসা চাষ পদ্ধতি

শসা চাষ

 শসা চাষ পদ্ধতি আধুনিক উপায়ে করার মাধ্যমে কৃষিতে অনেক ধাপ আমরা এগিয়েছি।

শসা চাষ পদ্ধতি

শসা

 

শসা একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। শসায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্ক রয়েছে।

শসা চাষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করা হয়। তবে গ্রীষ্মকালে শসা চাষ বেশি হয়। শসা চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হলো মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস।

শসা চাষের জন্য জমি নির্বাচন

শসা চাষের জন্য উঁচু, সুনিষ্কাশিত ও ভালো নিকাশী ব্যবস্থা সম্পন্ন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমির পিএইচ ৫.৫ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে হওয়া উচিত।

জমি তৈরি

শসা চাষের জন্য জমি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে। জমিতে গোবর সার, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

শসার বীজ বপণ

বীজের পরিমান: জাতভেদে বীজের পরিমাণ শতক প্রতি ১.৫-৪ গ্রাম হারে

শসার বীজ বপণের জন্য অঙ্কুরোদগম তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন। সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বীজ বপণ করা হয়।

বীজ বপণের জন্য জমিতে লাইন তৈরি করে নিতে হবে। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৬০ থেকে ৭৫ সেমি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেমি রাখতে হবে। বীজ বপণের পর মাটি হালকাভাবে চাপা দিয়ে দিতে হবে।

জাতভেদে ফেব্রুয়ারী-মার্চ (মধ্য মাঘ-মধ্য ফাল্গুন) উপযুক্ত সময় ।

শসা চাষ পদ্ধতি

শসা চাষে সারের নাম ও পরিমাণ

হেক্টর প্রতি সার

শতক প্রতি সার

পঁচা গোবর

২০ কেজি

ইউরিয়া

৩২০ গ্রাম

টি এস পি

৪০০ গ্রাম

এম ও পি

২০০ গ্রাম

জিপসাম

২০০ গ্রাম

দস্তা

৪৮ গ্রাম

বোরন

৪০ গ্রাম

সেচ ও নিকাশী ব্যবস্থা

শসা চাষের জন্য সেচ ও নিকাশী ব্যবস্থা ভালোভাবে করতে হবে। শসার গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে গাছ পচে যেতে পারে। তাই সেচের পর জমি থেকে অতিরিক্ত পানি অপসারণ করতে হবে।

আগাছা দমন

শসা চাষে আগাছা দমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আগাছা গাছের পুষ্টি উপাদান শোষণ করে এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। তাই আগাছা দমনের জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগ দমন

শসা চাষে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হতে পারে। পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ থেকে শসা গাছকে রক্ষা করার জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংগ্রহ

শসা পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে। শসা পরিপক্ব হলে এর রঙ হালকা সবুজ থেকে গাঢ় সবুজ হয় এবং এর শাঁস নরম হয়।

গ্রীষ্মকালীন শসা চাষে কিছু ইউনিক টিপস

  • গ্রীষ্মকালীন শসা চাষে জৈব সার ব্যবহারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায় এবং গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • গ্রীষ্মকালীন শসা চাষে পানি সেচের পরিমাণ কমাতে হবে। গ্রীষ্মকালে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকে তাই পানি সেচের পরিমাণ কমালেই গাছের পানির চাহিদা পূরণ হয়।
  • গ্রীষ্মকালীন শসা চাষে পোকামাকড় ও রোগ দমনের জন্য জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ হয় না এবং সবজির গুণাগুণও নষ্ট হয় না।

শসার কিছু জাতের নাম

ডেডি ২২৩১ এফ-১, তিতুমীর এফ-১, গ্রীন কিং, শীলা, বারমাসী, ডেসটিনি, বুলবুল এফ-১ ইত্যাদি তীব্র শীতব্যাতীত সারাবছর চাষ উপযোগী

এই জাতের শসাগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হয়।

শসা চাষে সফল হওয়ার জন্য কিছু প্রযুক্তি

শসা চাষে সফল হওয়ার জন্য কিছু প্রযুক্তি হলো:

শসা চাষ

মাচা পদ্ধতিতে চাষ

মাচা পদ্ধতিতে চাষ করলে শসার গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং ফলন ভালো হয়। মাচা পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য প্রথমে জমিতে লাইন তৈরি করে নিতে হবে। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৬০ থেকে ৭৫ সেমি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেমি রাখতে হবে। বীজ বপণের পর মাটি হালকাভাবে চাপা দিয়ে দিতে হবে। তারপর বীজ গজানোর পর চারা গজানোর পর বীজ থেকে চারা ১৫ থেকে ২০ সেমি দূরে মাচায় বেঁধে দিতে হবে। মাচা তৈরির জন্য কাঠের বাঁশ বা লোহার খুঁটি ব্যবহার করা যেতে পারে। মাচার উচ্চতা ২ থেকে ৩ মিটার হওয়া উচিত।

পলিহাউস বা গ্রিনহাউসে চাষ

পলিহাউস বা গ্রিনহাউসে চাষ করলে শসার ফলন ভালো হয়। পলিহাউস বা গ্রিনহাউসে চাষ করলে শসার গাছকে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। এছাড়াও, পলিহাউস বা গ্রিনহাউসে চাষ করলে শসার ফলন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

  • জৈব পদ্ধতিতে চাষ

জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে শসার গুণগত মান ভালো হয়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য জমিতে গোবর সার, কম্পোস্ট সার, ছাই ইত্যাদি জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও, জৈব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে।

  • উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহার

উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহার করলে শসার ফলন ভালো হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু উচ্চফলনশীল শসার জাত রয়েছে। এই জাতের শসার বীজ ব্যবহার করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

শসা চাষে করণীয়

শসা চাষে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:

  • জমি নির্বাচন: শসা চাষের জন্য উঁচু, সুনিষ্কাশিত ও ভালো নিকাশী ব্যবস্থা সম্পন্ন জমি নির্বাচন করতে হবে।
  • জমি তৈরি: জমি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে। জমিতে গোবর সার, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • বীজ বপণ: বীজ বপণের জন্য অঙ্কুরোদগম তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন। সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বীজ বপন করা হয়।
  • সেচ: শসার গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। তাই সেচের পর জমি থেকে অতিরিক্ত পানি অপসারণ করতে হবে।
  • আগাছা দমন: আগাছা দমন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আগাছা গাছের পুষ্টি উপাদান শোষণ করে এবং গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। তাই আগাছা দমনের জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • পোকামাকড় ও রোগ দমন: শসা চাষে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হতে পারে। পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • সংগ্রহ: শসা পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে। শসা পরিপক্ব হলে এর রঙ হালকা সবুজ থেকে গাঢ় সবুজ হয় এবং এর শাঁস নরম হয়।

এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে শসা চাষে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

শসার কিছু রোগ ও তার প্রতিকার

শসা গাছ

শসার কিছু রোগ হলো:
  • পাউডারি মিলডিউ
  • ডাউনিমিলডিউ
  • লেট ব্লাইট
  • ম্যাগনিসিয়াম ঘাটতি
  • জিংক ঘাটতি
এই রোগগুলোর প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
  • রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
  • রোগের কারণসমূহ চিহ্নিত করে তার প্রতিকার করা উচিত।
  • রোধক বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ হবে না এবং সবজির গুণাগুণও নষ্ট হবে না।

 

শসার কিছু পোকামাকড় ও তার প্রতিকার
শসার কিছু পোকামাকড় হলো:
  • থ্রিপস
  • ফল ছিদ্রকারী পোকা
  • ফল মথ
  • ফল ছিদ্রকারী মাছি
  • পাতা মোড়ানো পোকা

এই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • পোকামাকড়ের আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
  • পোকামাকড়ের প্রজাতি চিহ্নিত করে তার প্রতিকার করা উচিত।
  • কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • জৈব কীটনাশক ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ হবে না এবং সবজির গুণাগুণও নষ্ট হবে না।
শসা চাষে সফল হওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ
  • সঠিক জাতের শসা নির্বাচন করতে হবে।
  • উত্তম মানের বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • জমি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।
  • সঠিক পরিমাণে ও সময়ে সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
  • আগাছা দমন করতে হবে।
  • পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করতে হবে।
  • পরিপক্ব হলে শসা সংগ্রহ করতে হবে।

এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে শসা চাষে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

শসা চাষে সফল হওয়ার জন্য কিছু টিপস

  • উর্বর দোআঁশ মাটিতে শসা চাষ করতে হবে।
  • জমিতে ভালোভাবে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • বীজ বপণের আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
  • বীজ বপণের পর সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করতে হবে।
  • গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
  • আগাছা দমন করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করতে হবে।
  • পরিপক্ব হলে শসা সংগ্রহ করতে হবে।

এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে শসা চাষে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

শসার কিছু পুষ্টিগুণ

শসা একটি পুষ্টিকর সবজি। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। শসায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি৩, ভিটামিন বি৬, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্ক রয়েছে।

শসার কিছু উপকারিতা

শসার কিছু উপকারিতা হলো:

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
  • শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • ব্যথা উপশম করে
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

শসা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। বাংলাদেশে শসা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সালাদ, স্যুপ, তরকারি, মাছ-মাংসের পদ ইত্যাদিতে। শসার পানিশূন্যতা দূর করার ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও, শসায় থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।