বর্ষাকালে মরিচ চাষ পদ্ধতি জানা অজানা তথ্য।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা হলো
বর্ষাকালে মরিচ চাষ পদ্ধতি
- এটি একটি লাভজনক ব্যবসা
বর্ষাকালে মরিচ চাষ আমাদের একটি অর্থকারী ফসল। জনপ্রিয় মশলা যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাবারে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশেও মরিচের চাহিদা বেশ ভালো। বর্ষাকালে মরিচ চাষ করা বেশ লাভজনক।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের সুবিধা**
* বর্ষাকালে আবহাওয়া মরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত থাকে।* বৃষ্টিপাতের কারণে মাটিতে আর্দ্রতা থাকে, যা মরিচের বৃদ্ধির জন্য ভালো।* বর্ষাকালে রোগবালাই কম হয়।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত জায়গা**
* উঁচু জমি মরিচ চাষের জন্য ভালো।* জমির নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে।* জমিতে পানি জমে থাকলে মরিচের ক্ষতি হয়।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের জন্য জমি তৈরি**
* জমি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে।* জমিতে গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে।* জমিতে সার প্রয়োগের পরে ভালোভাবে জমিতে মিশিয়ে নিতে হবে।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের জন্য বীজ নির্বাচন**
![বর্ষাকালের মরিচ চাষ](https://infoseba.com/wp-content/uploads/2024/01/Untitled-design-5.webp)
* উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন করতে হবে।* বীজের মান ভালো হতে হবে।* বীজ অবশ্যই ভালোভাবে শুকানো থাকতে হবে।মরিচের জাত: বাংলাদেশে মরিচের বিভিন্ন জাত চাষ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতগুলো হলো:
বারি মরিচ-১বারি মরিচ-২বারি মরিচ-৩বারি মরিচ-৪বারি মরিচ-৫মরিচের ফলন: মরিচের ফলন বেশ ভালো হয়। প্রতি বিঘা জমিতে মরিচের ফলন প্রায় ৭-৮ টন হয়।**বর্ষাকালে মরিচ চাষের জন্য বীজ বপন**আমারা মরিচ চাষ করার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করবো নিজে একটি আর্দশ বীজ উৎপাদনের জন্য। বিশেষ করে বর্ষাকালে আমাদের কে বীজ বপনের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে একটি আর্দশ বীজতলা তৈরি করা। **বর্ষাকালে মরিচ চাষের জন্য চারা রোপণ*** বীজ থেকে চারা গজানোর ৩০-৩৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।* চারা রোপণের সময় সাবধানে চারা তুলতে হবে।* চারা রোপণের পরে ভালোভাবে জল দিতে হবে।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের জন্য পরিচর্যা**
* মরিচ গাছের চারপাশে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।* মাঝে মাঝে জল দিতে হবে।* সার প্রয়োগ করতে হবে।* রোগবালাই দমন করতে হবে।
মরিচ চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
মরিচ গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- পোকামাকড়:
- ফল ছিদ্রকারী পোকা
- মরিচ মাজরা পোকা
- থ্রিপস পোকা
- জাব পোকা
- পাতা মোড়ানো পোকা
- রোগবালাই:
- মরিচের গোড়া পচা রোগ
- মরিচের পাতা কুঁকড়ানো রোগ
- মরিচের ঝলসানো রোগ
- মরিচের ছিদ্র রোগ
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে হবে:
- সঠিক জাত নির্বাচন: রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করলে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনে সহায়তা পাওয়া যায়।
- পরিচ্ছন্ন পরিবেশ: ক্ষেতের আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখলে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়।
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: ক্ষেত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
- জৈব বা রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ: পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হলে জৈব বা রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে।
জৈব নিয়ন্ত্রণ:
- আগাছা দমন: আগাছা পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আশ্রয়স্থল। তাই ক্ষেতের আগাছা দমন করলে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়।
- সাদা মাছির আক্রমণ প্রতিরোধে ঝোপঝাড় দূরে রাখতে হবে।
- ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে ফুল আসার সময় গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
- থ্রিপস পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে পাতায় পানি ছিটাতে হবে।
রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ:
- পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হলে নিম্নলিখিত রাসায়নিক কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে:
- পোকামাকড় দমনে: ম্যালাথিয়ন, কার্বেন্ডাজিম, সেভিন, ওমাইট, ইত্যাদি।
- রোগবালাই দমনে: ম্যানকোজেব, কপার অক্সিক্লোরাইড, সালফার, ইত্যাদি।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে:
- কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহারের আগে ঔষধের গাইডলাইন ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে।
- কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোশাক পরতে হবে।
- কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পর ক্ষেতের পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মরিচ চাষে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
**মরিচ চাষে রোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা **
মরিচ একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় ফসল। বাংলাদেশে মরিচ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মরিচ চাষে রোগবালাই একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। মরিচের রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
* **গোড়া পচা রোগ:** এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট। রোগের লক্ষণ হলো গাছের গোড়া ও মূল বাদামি হয়ে পড়ে এবং নরম হয়ে যায়। গাছ ধীরে ধীরে মরে যায়।
* **ফুল ও ফল ঝরা রোগ:** এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট। রোগের লক্ষণ হলো ফুল ও ফল ঝরে পড়ে।
* **পাতা মোড়ানো রোগ:** এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট। রোগের লক্ষণ হলো পাতা কুঁকড়ে যায় এবং হলুদ হয়ে যায়।
* **পাতা ঝলসানো রোগ:** এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট। রোগের লক্ষণ হলো পাতায় বাদামি দাগ দেখা যায়।
* **ফল পচা রোগ:** এই রোগটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট। রোগের লক্ষণ হলো ফল পচে যায়।
**মরিচ চাষে রোগ দমনের ব্যবস্থাপনা**
মরিচ চাষে রোগ দমনের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা যেতে পারে:
* **রোগের প্রতিরোধী জাতের মরিচ চাষ করা।**
* **সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করা।**
* **জমি ভালোভাবে চাষ করে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা।**
* **অতিরিক্ত সেচ না দেওয়া।**
* **আগাছা দমন করা।**
* **পচা ফল ও পাতা জমি থেকে অপসারণ করা।**
* **সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।**
**রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।**
**রোগের প্রতিকারে ব্যবহারযোগ্য রাসায়নিক কীটনাশক**
* **গোড়া পচা রোগের জন্য:** কিউপ্রাভিট, ব্যভিস্টিন, ম্যানকোজেব, ট্রাইকোডার্মা
* **ফুল ও ফল ঝরা রোগের জন্য:** ম্যানকোজেব, ট্রাইকোডার্মা
* **পাতা মোড়ানো রোগের জন্য:** ক্লোরট্রাইফিলম, ম্যানকোজেব, ট্রাইকোডার্মা
* **পাতা ঝলসানো রোগের জন্য:** ক্লোরট্রাইফিলম, ম্যানকোজেব, ট্রাইকোডার্মা
* **ফল পচা রোগের জন্য:** ক্লোরট্রাইফিলম, ম্যানকোজেব, ট্রাইকোডার্মা
**মরিচ চাষে রোগ দমনে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার**
ট্রাইকোডার্মা একটি জীবাণু নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান। এটি ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। মরিচ চাষে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করলে নিম্নলিখিত সুবিধা পাওয়া যায়:
* **রোগের প্রাদুর্ভাব কম হয়।**
* **ফলন বৃদ্ধি পায়।**
* **ফলের গুণগত মান ভালো হয়।**
মরিচ চাষে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহারের নিয়ম হলো:
* **বীজ বপনের আগে বীজ ট্রাইকোডার্মা দ্বারা শোধন করে নিতে হবে।**
* **বীজতলা তৈরির আগে মাটিতে ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ করতে হবে।**
* **চারা রোপণের আগে চারা ট্রাইকোডার্মা দ্বারা শোধন করে নিতে হবে।**
* **ফসল বপনের পর প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগ করতে হবে।**
ট্রাইকোডার্মা প্রয়োগের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ১০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা গুঁড়া মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
মরিচ চাষে সার প্রয়োগ
মরিচ গাছে ভালো ফলন পেতে হলে নিয়মিত সার প্রয়োগ করা জরুরি। মরিচের জমিতে প্রতি হেক্টরে নিম্নলিখিত পরিমাণ সার প্রয়োগ করা হয়:
* **গোবর:** ১০ টন* **ইউরিয়া:** ২৫০ কেজি* **টিএসপি:** ২০০ কেজি* **এমওপি:** ১৫০ কেজি
সার প্রয়োগের সময়সূচি:
* **জমি তৈরির সময়:** গোবর, টিএসপি ও ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।* **চারা রোপণের ২৫ দিন পর:** ৮৪ কেজি ইউরিয়া ও ৩৪ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।* **চারা রোপণের ৫০ দিন পর:** ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।* **চারা রোপণের ৭০ দিন পর:** ৮৩ কেজি ইউরিয়া ও ৩৩ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগের উপায়
* **গোবর সার:** জমি তৈরির সময় গোবর সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।* **রাসায়নিক সার:** রাসায়নিক সার ছিটিয়ে দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
সার প্রয়োগের নিয়ম:
* **সার প্রয়োগের আগে জমি ভালোভাবে ভেজাতে হবে।*** **সার প্রয়োগের পর জমি ভালোভাবে চাষ দিতে হবে।*** **সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে।**
সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:
* **সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ভর করে মাটির উর্বরতা, জাত ও চাষাবাদের পদ্ধতির উপর।*** **সার প্রয়োগের সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে হবে।*** **সার প্রয়োগের পর সেচ দিতে হবে।**
সার প্রয়োগের ফলে মরিচ গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়, ফুল ও ফলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং ফলের গুণগত মান ভালো হয়।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের জন্য ফল সংগ্রহ**
* মরিচ গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিন পর ফল সংগ্রহ করা শুরু করা যায়।
* ফল পরিপক্ক হওয়ার পরে ছিঁড়ে সংগ্রহ করতে হবে।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের লাভ**
* বর্ষাকালে মরিচ চাষ করলে ভালো ফলন হয়।
* মরিচের বাজারমূল্য ভালো থাকে।
* তাই বর্ষাকালে মরিচ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা।
**বর্ষাকালে মরিচ চাষের কিছু টিপস**
* বর্ষাকালে মরিচ গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে মরিচের ক্ষতি হয়। তাই বৃষ্টির সময় মরিচ গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে তা নিষ্কাশন করে দিতে হবে।
* বর্ষাকালে মরিচ গাছের রোগবালাই বেশি হয়। তাই রোগবালাই দমনের জন্য নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।
* বর্ষাকালে মরিচ গাছের পুষ্টির চাহিদা বেশি থাকে। তাই নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে।
বর্ষাকালে মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং ভালো লাভ করা যায়। তাই আপনি যদি মরিচ চাষ করতে চান তাহলে বর্ষাকালে চাষ করতে পারেন।
thank you for the information about the farming
উপকারী একটি পোস্ট ধন্যবাদ
This is fantastic! Keep up the good work. ❤️
Thanks to you..