সবজি চাষের সময়

সবজি চাষের সময় সূচি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি।বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এখানে সরাবছর কোন না কোন সবজি চাষ করা হয়ে থাকে।

সবজি চাষের সময়

সবজি চাষের সময়

সবজি চাষের সময়:

কোন সবজি কখন চাষ করা যায়:

  • সবজি চাষের সময় গ্রীষ্মকাল (মার্চ-জুন):
    • লাউ, ঝিঙা, কুমড়া, করলা, ধুন্দুল, পটল, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচ, শিম, লাল শাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক ইত্যাদি।
  • সবজি চাষের সময় বর্ষাকাল (জুলাই-সেপ্টেম্বর):
    • লাউ, ঝিঙা, কুমড়া, করলা, ধুন্দুল, পটল, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচ, শিম, লাল শাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, পুঁইশাক, বরবটি, লাউ কুমড়া, চালকুমড়া, বাদামী কুমড়া, তিতা কুমড়া ইত্যাদি।
  • সবজি চাষের সময় শীতকাল (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারী):
    • বিভিন্ন ধরনের কপি (বাঁধা কপি, ফুলকপি, ব্রকলি), গাজর, শালগম, মিষ্টি আলু, বিভিন্ন ধরনের শাক (পালং শাক, মেথি শাক, লাউ শাক, ঝিঙা শাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক, পুঁই শাক), ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, ঝিঙা, কুমড়া, করলা, ধুন্দুল, পটল, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচ, শিম ইত্যাদি।

কোন মাসে কি কি সবজি চাষ করা হয়

সবজি চাষের সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আমাদের দেশে সাধারণত ঋতু ছয়টি। আর কৃষির মৌসুম তিনটি-
  • সবজি চাষের সময় :খরিফ-১,
  • সবজি চাষের সময় :খরিফ-২ ও
  • সবজি চাষের সময় :রবি মৌসুম

উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি কাজ করতে হয়। চাষিরা নিজস্ব চিন্তা ধারা, চাহিদা ও আর্থিক দিক বিবেচনা করে নিজের মতো প্রতিদিনের কাজগুলোকে সাজিয়ে নেবেন ও বাস্তবে রূপ দেবেন।

বৈশাখ (মধ্য এপ্রিল-মধ্য মে):

লালশাক, গিমাকলমি, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক, বেগুন, মরিচ, আদা, হলুদ, ঢেঁড়স বীজ বপনের উত্তম সময়। সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চারা রোপণ করা যায়। ৫ তজমিষ্টিকুমড়া, করলা, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিংগা, চালকুমড়া, শসার মাচা তৈরি, চারা উৎপাদন করতে হবে। কুমড়া জাতীয় সবজির পোকা মাকড় দমনের ব্যবস্থা ও সেচ প্রদান করতে হবে। খরিফ-১ মৌসুমের সবজির বীজবপন, চারা রোপণ করতে হবে, ডাঁটা, পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

জ্যৈষ্ঠ (মধ্য মে-মধ্য জুন):

আগে বীজতলায় বপনকৃত খরিফ-২ এর সবজির চারা রোপণ, সেচ ও সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করতে হবে। শজিনা সংগ্রহ করতে হবে এবং গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চারা রোপণ ও পরিচর্যা করতে হবে। ঝিঙা, চিচিংগা, ধুন্দুল, পটল, কাঁকরোল সংগ্রহ ও পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। নাবীকুমড়া জাতীয় ফসলের মাচা তৈরি, সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে। ফলের চারা রোপণের গর্ত প্রস্তুত ও বয়স্ক ফল গাছে সুষম সার প্রয়োগ, ফলন্ত গাছের ফল সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

আষাঢ় (মধ্য জুন-মধ্য জুলাই):

গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, কাঁচা মরিচের পরিচর্যা, শিমের বীজবপন, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড়, রোগবালাই দমন করতে হবে। আগে লাগানো বেগুন, টমেটো ও ঢেঁড়সের বাগান থেকে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। খরিফ-২ সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সেচ, সার প্রয়োগ করতে হবে। ফলসহ ওষুধি গাছের চারা বা কলম রোপণ, খুঁটি দিয়ে চারা বেঁধে দেয়া, খাঁচা বা বেড়া দেয়া ও ফলগাছে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।

শ্রাবণ (মধ্য জুলাই-মধ্য আগস্ট):

আগাম রবি সবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো, বেগুনের বীজতলা তৈরি, বীজবপন শুরু করা যেতে পারে।

ভাদ্র (মধ্য আগস্ট-মধ্য সেপ্টেম্বর):

আগাম রবি সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, ফুলকপি, টমাটো, বেগুন, কুমড়া, লাউয়ের জমি তৈরি, চারা রোপণ, সার প্রয়োগ ইত্যাদি করতে হবে। মধ্যম ও নাবী রবি সবজির বীজতলা তৈরি, বীজবপন করতে হবে। নাবী খরিফ-২ সবজি সংগ্রহ, বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। আগে লাগানো ফলের চারার পরিচর্যাসহ ফলের উন্নত চারা বা কলম লাগানো, খুঁটি দেয়া, বেড়া দিয়ে চারাগাছ সংরক্ষণ, ফল সংগ্রহের পর গাছের অঙ্গ ছাঁটাই করতে হবে।

আশ্বিন (মধ্য সেপ্টেম্বর-মধ্য অক্টোবর):

আগাম রবি সবজির চারা রোপণ, চারার যত্ন, সেচ, সার প্রয়োগ, বালাই দমনসহ নাবী রবি সবজির বীজতলা তৈরি, বীজবপন, আগাম টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপির আগাছা দমন করতে হবে। শিম, লাউ, বরবটির মাচা তৈরি ও পরিচর্যা করতে হবে। রসুন, পেঁয়াজের বীজবপন, আলু লাগাতে হবে। ফল গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগ করতে হবে।

কার্তিক (মধ্য অক্টোবর-মধ্য নভেম্বর):

আলুর কেইল বাঁধা ও আগাম রবি সবজির পরিচর্যা ও সংগ্রহ করতে হবে। মধ্যম রবি সবজি পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ও সেচ প্রদান করতে হবে। নাবী রবি সবজির চারা উৎপাদন, জমি তৈরি এবং চারা লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপির গোড়া বাঁধা ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। মরিচের বীজবপন ও চারা রোপণ করতে হবে। ফলগাছের পরিচর্যা, সার প্রয়োগ না করে থাকলে সার ব্যবহার ও মালচিং করে মাটিতে রস সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

অগ্রহায়ণ (মধ্য নভেম্বর-মধ্য ডিসেম্বর):

টমেটো গাছ

মিষ্টি আলুর লতা রোপণ, পূর্বে রোপণকৃত লতার পরিচর্যা, পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচের চারা রোপণ, আলুর জমিতে সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান ইত্যাদি করতে হবে। অন্যান্য রবি ফসল যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগমের চারার যত্ন, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা পরিষ্কার ও সবজি সংগ্রহ করতে হবে। ফল গাছের মালচিং এবং পরিমিত সার প্রয়োগ করতে হবে।

আমাদের আরও একটি পোস্ট পড়ুন:- শীতকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি 

মাঘ (মধ্য জানুয়ারি-মধ্য ফেব্রম্নয়ারি):

আলু, পেঁয়াজ, রসুনের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সেচ, সার প্রয়োগ, টমেটোর ডাল ও ফল ছাঁটা, মধ্যম ও নাবী রবি সবজির সেচ, সার, গোড়াবাঁধা, মাচা দেয়া এবং আগাম খরিফ-১ সবজির বীজতলা তৈরি বা মাদা তৈরি বা বীজবপন করতে হবে। বীজতলায় চারা উৎপাদনে বেশি সচেতন হতে হবে। কেননা, সুস্থ-সবল রোগমুক্ত চারা রোপণ করতে পারলে পরবর্তী সময়ে অনায়াসে ভালো ফসল বা ফলন আশা করা যায়। ফলগাছের পোকামাকড়, রোগাবালাই দমন ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে।

ফাগুন (মধ্য ফেব্রম্নয়ারি-মধ্য মার্চ):

নাবী খরিফ-১ সবজির বীজতলা তৈরি, মাদা তৈরি, বীজবপন, ঢেঁড়স, ডাঁটা লালশাকের বীজবপন করতে হবে। আগাম খরিফ-১ সবজির চারা উৎপাদন ও মূল জমি তৈরি, সার প্রয়োগ ও রোপণ করতে হবে। আলু, মিষ্টিআলু সংগ্রহ, রবি সবজির বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাগানের অন্যান্য ফসলের পরিচর্যা করতে হবে। আলু সংরক্ষণে বেশি যত্নবান হোন। এ ক্ষেত্রে জমিতে আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে সমুদয় গাছ কেটে গর্তে আবর্জনা সার তৈরি করুন। এভাবে মাটির নিচে ১০ দিন আলু রাখার পর অর্থাৎ রোপণের ১০০ দিন পর আলু তুলতে হবে। এতে চামড়া শক্ত হবে ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে। ফলগাছের গোড়ায় রস কম থাকলে মাঝে মধ্যে সেচ প্রদান, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করা দরকার।

চৈত্র (মধ্য মার্চ মধ্য-এপ্রিল):

বেগুন গাছ

গ্রীষ্মকালীন বেগুন, টমেটো, মরিচের বীজবপন বা চারা রোপণ করা দরকার। নাবী জাতের বীজতলা তৈরি ও বীজবপন করতে হবে। যে সব সবজির চারা তৈরি হয়েছে সেগুলো মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। সবজি ক্ষেতের আগাছা দমন, সেচ ও সার প্রয়োগ, কুমড়া জাতীয় সবজির পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। নাবী রবি সবজি উঠানো, বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি হলে ফলের গুটি বা কড়া ঝরে যায়। তাই এ সময় প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করা জরুরি। 

সবজি চাষের সময় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার ফলে অনেক কিছু সম্পর্কে অবহিত হলাম। যেমন কোন মাসে আমরা কি সবজি চাষ করতে পারি। এতে করে আমরা আগাম সবজির বাজার দর ধরতে পারবো সাথে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবো।

সবজি চাষের সময় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার ফলে সবজির সঠিক পরিচর্চা করতে সহজ হবে।রোগবালাই কম লাগবে খরচ অনেকাংশে কমে যাবে ফলন বেশি হবে।

 

ধন্যবাদ

3 thoughts on “সবজি চাষের সময়”

Leave a Comment