আগাম টমেটো আবাদে_কৃষক_ভাইদের_করণীয়:টমেটো গাছের রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা ও বিভিন্ন পরামর্শ কৃষি অফিসারের কাছ থেকে জানা।
জলবায়ুঃ
টমেটো এদেশে শীতকালীন ফসল। উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা টমেটো গাছের রোগ বিস্তারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। আবার উচ্চ তাপমাত্রা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় ফুল ঝরে যায়। রাতের তাপমাত্রা ২৩° সে. এর নিচে থাকলে ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশী উপযোগী। গড় তাপমাত্রা ২০°-২৫° সে. এ টমেটোর ভাল ফলন হয়।
মাটিঃ
আলো বাতাসযুক্ত উর্বর দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভাল। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ সব মাটিতেই টমেটো ভাল জন্মে। বন্যার সময় পলি জমে এমন জমিতে এর ফলন সবচেয়ে বেশী। মাটির অম্লতা ৬-৭ হলে ভাল হয়। মাটির অম্লতা বেশী হলে চুন প্রয়োগ করা উচিত।
হাইব্রিড টমেটো জাত:
টমেটোর জনপ্রিয় জাত সমূহ হল
বাহুবালি/বারি-৪/বারি-৫/বারি-৬/বারি-৮/বারি-১০/বারি-১৩/চামেলী/দিপালী/পূর্বালী/হিটলার /আশা/মিন্টু সুপার/ বারি হাইব্রিড-৩/বারি হাইব্রিড-৪/বারি হাইব্রিড-৮/বারি হাইব্রিড-১০/উজালা/স্মার্ট-১২১৭/মঙ্গলরাজা
#বীজ_বপনের_সময়ঃ
#শীতকালীনঃ
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে (আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসে)
#গ্রীষ্ম_বর্ষাকালঃ
এপ্রিল-জুন মাসে (বৈশাখ-আষাঢ় মাসে)
#বপন_পদ্ধতিঃ
বীজতলায় বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হব। তারপরে মুল জমিতে সারি করে চারা রোপন করতে হবে।
#বীজহার_বীজের_পরিমানঃ
প্রতি শতকে বীজের প্রয়োজন ১ গ্রাম
#জীবনকালঃ ১২০-১৩০ দিন (জাতভেদে)
#চারা_উৎপাদনঃ
টমেটোর চারা উৎপাদনের জন্য ১ মিটার প্রস্থ ৩ মিটার দৈর্ঘ্যের মাপে বেড তৈরি করে সুস্থ সবল ৫০ গ্রাম বীজ ঘন করে বপন করতে হবে।
#হার্ডেনিংঃ
চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায় ৪০ সে.মি. দূরত্বে স্থানান্তর করতে হবে। এতে চারা মূত্যহার কমে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
#বীজতলায়_ছাউনি/ঢাঁকা দেওয়াঃ
বীজতলায় সুস্থ সবল চারা উৎপাদনের জন্য নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায়ই সাদা মাছি পোকার দ্বারা পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ ছড়ানোর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। এরুপ সুস্থ সবল ও ভাইরাসমুক্ত চারা রোপন করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এর জন্য প্রতি ইঞ্চিতে ৪০-৬০ টি ছিদ্রযুক্ত নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
#পলিথিন/চাটাই দেওয়াঃ
অতিরিক্ত বৃষ্টি ও রোদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে পলিথিন ও চাটাই ব্যবহার করতে হবে।
#জমি_তৈরীঃ
টমেটোর ভাল ফলন অনেকাংশেই জমি তৈরীর উপর নির্ভর করে। তাই ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
#বেড_তৈরিঃ
মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১ মি. চওড়া ও ১৫-২০ সে.মি. উঁচু বেড তৈরী করতে হবে। দুটি বেডের মাঝখানে ৩০ সে.মি. নালা করতে হবে যাতে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের জন্য সুবিধা হয়।
#সার_প্রয়োগঃ (প্রতি শতাংশ জমিতে)
গোবর ৪০ কেজি
ইউরিয়া ১২০০ গ্রাম
টিএসপি ৮০০ গ্রাম
পটাশ ৭৫০ গ্রাম
জিপসাম ২২০ গ্রাম
জিংক ২০ গ্রাম
বোরন ২৫ গ্রাম
#সার_প্রয়োগ_পদ্ধতিঃ
জমি তৈরির সময় সমস্ত গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক বোরন, ও এক তৃতীয়াংশ পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপনের ১৫ দিনে ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম হারে এবং
চারা রোপনের ২৫ দিনে ইউরিয়া ৪০০ গ্রামও পটাশ ২৫০ গ্রাম এবং।
চারা রোপনের ৪০ দিনে ইউরিয়া ৪০০ গ্রাম ও পটাশ ২৫০ গ্রাম হারে গাছের গোড়া হতে ১০-১৫ সে: মি: দুরত্বে প্রয়োগ করতে হবে।
#চারার_বয়স
চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন অথবা ৪-৬ পাতা বিশিষ্ট হলে জমিতে রোপন করতে হবে।
#চারা_রোপনের_দুরত্বঃ
সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি. চারা থেকে চারা ৪০ সে.মি. দূরত্বে লাগাতে হবে।
#চারা_উত্তোলনঃ
বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। এ জন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে।
#চারা_রোপনের_সময়ঃ
বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ করাই উত্তম এবং লাগানোর পর গোড়ায় হালকা সেচ প্রদান করতে হবে।
#সেচঃ
চারা রোপণের ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ ও পরবর্তীতে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে টমেটো চাষের জন্য ঘন ঘন সেচের প্রয়োজন হয়। বর্ষা মৌসুমে তেমন একটা সেচের প্রয়োজন হয় না।
#নিষ্কাশনঃ
টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা। সেচ অথবা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য নালা পরিমিত চওড়া (৩০-৪০ সে.মি.) এবং এক দিকে সামান্য ঢালু হওয়া বাঞ্ছনীয়।
#মালচিংঃ
প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরিভাগের চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।
#আগাছা_দমনঃ
টমেটোর জমিতে প্রয়োজন মত নিড়ানী দিয়ে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
#হরমোন_প্রয়োগঃ
গ্রীষ্মকালীন টমেটোতে অতিরিক্ত ও উচ্চ তাপমাত্রায় পরাগায়নের বিঘ্ন ঘটে ফলে ফুল ও ফল ঝরে পরে তাই ফুটা অবস্থায় সকাল ৯ টা হতে ১১ টায় ৪সিপিএ জাতীয় ভেজিমেক্স/প্রোটোজিম/বলবান/এস্টার যে কোন একটি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করে দিতে পারেন।
#বিশেষ_পরিচর্যাঃ
১ম ফুলের গোড়ার ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া নিচের সব পার্শ্ব কুশি ছাটাই করতে হবে। গাছ বাঁশের খুটি দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে।
#ফসল_তোলাঃ
ফলের নিচে ফুল ঝরে যাওয়ার পর যে দাগ থাকে ঐ স্থান থেকে লালচে ভাব শুরু হলেই বাজারজাত করণের জন্য ফল সংগ্রহ করতে হবে। এতে ফল অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।অপরিপক্ক অবস্থায় ফল উত্তোলন করে হরমোণ প্রয়োগের মাধ্যমে ফল পাকানো হলে ফলের স্বাভাবিক স্বাদ ও পুষ্টি গুন নষ্ট হয় এবং ফলনও কম হয়। তাই এভাবে ফসল সংগ্রহ ও পাকানো মোটেই সমীচীন নয়।
#ফলনঃ
জাত ভেদে ৫০-৯০ টন/হেক্টর (২০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ)
0 Comments