লাউ চাষ পদ্ধতি

লাউ চাষ পদ্ধতি

সঠিক নিয়মে জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

লাউ চাষ পদ্ধতি আমাদের দেশে একটি অন্যতম সুস্বাদু সবজি চাষ এর মধ্য অন্যতম। লাউ সব ধরণের মাটিতে জন্মে। সাধারণত লাউ শীতকালে চাষ করা হয়ে থাকে। লাউয়ের পাতা নরম ও সবুজ বিধায় পাতা ও ডগা শাক হিসাবে এবং লাউ ভাজি ও তরকারী রান্না করে খাওয়া হয়।
লাউয়ের চেয়ে এর শাক পুষ্টিকর বেশি। লাউ লতানো উদ্ভিদ তাই সারা বছরই চারা লাগিয় চাষ করা যায়।

লাউ বীজ রোপণ করার আগে খেয়াল করে দেখে নিতে হবে আপনার এলাকায় কোন লাউ, লম্বা না গোল লাউ চাহিদা বেশি?
যে লাউয়ের চাহিদা বেশি সেই লাউ চাষ করতে হবে। নিচে লাউ চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

যে কোন সবজি চাষের ক্ষেত্রে জমি প্রস্তুতের পূর্বেই নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন-

যে ফসলটা চাষ করতে চান, সে ফসল চাষের বিষয়ে আপনার কতটুকু জ্ঞান আছে?
আপনাকে সহায়তা করবে এমন অভিজ্ঞ কেও কি আপনার আশেপাশে আছে?
আপনার এলাকায় সবজিটার চাহিদা কেমন?
এই সবজিটার পেছনে খাটা-খাটুনিতে আপনি কি আনন্দবোধ করবেন?
সবজিটা চাষাবাদে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুকি কেমন?
আপনার জায়গাটি সবজিটির জন্য অনুকূল নাকি প্রতিকূল?
উত্তর পজিটিভ হলে এগিয়ে যান।
★ আপনি কারো মুখে স্ট্রোবেরী বা শসা চাষ করে রাতারাতি বড় লোক হওয়ার গল্প শুনে মাঠে নেমে পড়লেন, কিন্তু আপনার এসব চাষ সম্পর্কে আগে-পিছে কিছুই জানা নাই।
তাহলে আপনার কৃষির শুরুটাই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

★ লাউ ফসলটায় ভাইরাস কম হয়, রিস্ক কম। তাই নতুন চাষিরা লাউ চাষ করতে পারেন।

তবে লাউ খুব দ্রুত বড় হয়, সপ্তাহে প্রায় ২-৩ দিন সংগ্রহ করতে হয়। তাই পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থা ভালো হতে হবে।

লাউয়ের চারা উৎপাদন
বীজতলা তৈরি ও বীজ বপণ
লাউ চাষের জন্য পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করে নিলে ভালো হয়। স্বাভাবিকভাবে আলো বাতাস থাকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। বেড ২০-২৫ সেমি উঁচু করতে হবে।

বীজ বপনের জন্য ৮*১০ সেমি আকারের পলিব্যাগ দরকার। অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে বা এক তৃতীয়াংশ কম্পেষ্ট সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে।
বীজ গজানোর জন্য মাটির জো ঠিক রাখতে হবে। মাটিতে জো না থাকলে পানি দিয়ে জো করে নিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে।

বীজের সহজ অংকুরোদগম
লাউয়ের বীজের খোসা কিছুটা শক্ত বধিায় অংকুরোদগম হতে সময় লাগে। সহজে অংকুরোদগমের জন্য পরিস্কার পানিতে ১৫-২০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে অথবা শতকরা ১% পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে একরাত ভিজিয়ে তারপর পলিব্যাগে বীজ বপন হবে।

বীজতলায় চারার পরিচর্যা
চারা অংকুরোদগম হওয়ার পর বেডে চারার সঠিক ভাবে পরিচর্যা করতে হবে। শীতের সময় চারা গজাতে সমস্যা হয়। এজন্য শীতের সময় বীজ গজানোর আগে প্রতি দিন রাতে বেড ঢেকে রাখতে হবে। এবং দিনের বেলাতে খোলা রাখতে হবে।
বেডে চারার চাহিদা অনুসারে পানি দিতে হবে।চারার গায়ে পানি না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পানি দেওয়ার ফলে পলিব্যাগের মাটি চটা বাধলে চটা ভেঙে দিতে হবে।

মূলজমি তৈরি ও চারা রোপন
জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি
দোআশ, এটেল দোআশ, বেলে দোআশ ইত্যাদি সব ধরনের মাটিতেই লাউ চাষ করা যায়।

মাটি : জৈব পদার্থ এঁটেল দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য ভাল হয়।
তবে বর্ষা মৌসুমে বেলে দোআঁশ মাটি আর খরা মৌসুমে এটেল দোআশ মাটি ভালো ফল দিবে। কারন, লাউ চাষে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। খরা মৌসুমে এটেল মাটি সহজে পানি ধরে রাখতে পারবে। আর বর্ষার অতিরিক্ত বর্ষণেও বেলে মাটি অতিরিক্ত পানি সহজে শুষে নিতে পারবে।
তবে মাটি যাই হোক, জৈব পদার্থ সম্মৃদ্ধ হলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারন…. লাউ গাছ হচ্ছে অত্যান্ত ক্ষুধার্ত আর পিপাসার্ত একটি উদ্ভিদ। তাকে যত খেতে দিবেন, আপনাকে ততো বেশি ভালোবাসা দিবে। রাসায়নিক সার দিয়ে তার ক্ষুধা নিবারন কষ্টসাধ্য এবং ত্রুটিপূর্ণ।

জলবায়ু: আমাদের দেশে লাউ চাষের জন্য উপযোগী মৌসুম হলো শীতকাল। বেশি গরমও না
আবার বেশি শীতও না এমন আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য ভাল।
বীজ গজানোর পর চারার বয়স যখন ১৬-১৭ দিন হবে তখন চারা মাঠে লাগানো উত্তম।
মাদা তৈরি এবং বেডে মাদা হতে মাদার দুরত্ব:
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে আপনার জমির আশেপাশে যেনো লাউ এর ভাইরাস পোষক উদ্ভিদ না থাকে অথবা ভাইরাসযুক্ত পুরোনো লাউ এর জমি না থাকে।
নতুবা বেশি দিন ফলন নিতে পারবেন না।
চাষের সময়:- চাষের সময় প্রকৃতপক্ষে লাউ শীতকালীন সবজি। তবে হাইব্রিড জাত আবিষ্কারের ফলে এখন গ্রীষ্মকালেও চাষাবাদ সম্ভব হয়। গরমে গাছের গ্রোথ ভালো হয়, তাই বর্তমানে গ্রীষ্মকালের ফলন মৌসুমী ফলনকেও ছাড়িয়ে যায়।
সবজিটা ঠান্ডা জাতীয় হওয়ায় গরমে… বিশেষ করে ফাল্গুন-জৈষ্ঠ মাসে সকলের একটু বেশিই প্রিয় হয়ে ওঠে।
শীতকালীন চাষের জন্য ভাদ্র-কার্তিক মাসে চারা রোপন করতে হবে আর গ্রীষ্মকালে চাষ করার জন্য মাঘ-জৈষ্ঠ মাসে বীজ/চারা রোপন করতে হবে।
লাউয়ের জাত নির্বাচন
বানিজ্যিকভাবে লাউ চাষ করতে গেলে জাত নির্বাচনের প্রতি অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের মনে অনেক রকম প্রশ্ন থাকে।

হাইব্রিড জাত করবো নাকি দেশি জাত?
কোনটি শীতকালীন জাত আর কোনটি গ্রীষ্মকালীন?
বড় সাইজ নাকি ফ্যামিলি সাইজ?
গোল নাকি লম্বা জাতে ফলন বেশি হয়?
সাদা লাউ, নাকি কালা লাউ করবো?
স্বল্পকালীন জাত নাকি দীর্ঘস্থায়ী জাত ভালো হবে?
কোন কোম্পানির জাত ভালো হবে?
ইত্যাদি ইত্যাদি….
নিচে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

★ শাক উৎপাদনের জন্য হলে দেশি জাত নির্বাচণ করতে হবে৷ এতে বীজের খরচ কম হবে, গাছের (রোগ ও পোকা-মাকড়ের প্রতি) সহনশীলতা বেশি হবে, ডগা মোটা হবে, কড়া কম আসবে এবং প্রচুর গ্রোথ হবে৷
এতে উৎপাদন বেশি হবে ও লাভবান হওয়া সম্ভব হবে৷ শহরাঞ্চলে শাকের চাহিদা বেশি, বিশেষ করে যে সময় সবজির মূল্য বেশি হয়।

★ তবে ফল নেয়ার জন্য হলে অবশ্যই হাইব্রিড জাত নির্বাচণ করতে হবে।

মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড লাউ বীজ পাওয়া যায়। সবগুলো জাতই মোটামুটি ভালো, তার পরও আমাদের জেনে-বুঝে জাত নির্বাচণ করতে হবে।

★ লাউ মূলত শীতকালীন সবজি। দেশি জাতগুলো শীতকালে ফলন দিয়ে থাকে। এর পূর্ব ইতিহাসে গ্রীষ্মকালে লাউ চিন্তা করা হতো না।

তবে লাল তীর কোম্পানির গ্রীষ্মকালীন লাউ

লাল তীর লাউ: স্বাদের রাজা, রান্নার রানী!

ভূমিকা:

লাউ, বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সবজি, যার স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অপরিসীম। লাল তীর কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমানের লাউ বীজ সরবরাহ করে আসছে, যা কৃষকদের লাভজনক উৎপাদন নিশ্চিত করছে।

এই টিউটোরিয়ালে, আমরা লাল তীর লাউ সম্পর্কে কিছু অনন্য তথ্য শেয়ার করব।

লাল তীর লাউ-এর বৈশিষ্ট্য:

  • উন্নত জাত:
    • রোগ প্রতিরোধী:
      • রোগের প্রকোপ কম
      • উচ্চ ফলন
      • কম কীটনাশক ব্যবহার
    • উচ্চ ফলনশীল:
      • প্রতি গাছে বেশি লাউ
      • বাজারে ভালো দাম
      • লাভজনক
  • দ্রুত বৃদ্ধি:
    • কম সময়ে পরিপক্ক:
      • বাজারে দ্রুত সরবরাহ
      • ভালো দাম
      • বছরে বেশিবার চাষ করা সম্ভব
  • সুস্বাদু:
    • মোটা আঁশ:
      • রান্নায় সুস্বাদু
      • পুষ্টিকর
      • দীর্ঘস্থায়ী
    • কম বীজ:
      • খাওয়ার জন্য আরও বেশি অংশ
      • কম অপচয়
      • বাজারে চাহিদা বেশি
  • বহুমুখী ব্যবহার:
    • বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা যায়:
      • তরকারি
      • মাছের ঝোল
      • মিষ্টি
      • পায়েস
    • ঔষধি গুণাবলী:
      • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
      • হজমশক্তি
      • ত্বকের যত্ন

লাল তীর লাউ চাষের পদ্ধতি:

  • মাটি ও জলবায়ু:
    • মাটি:
      • ভালোভাবে নিষ্কাশিত
      • জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ
      • 6.0 থেকে 7.0 pH
    • জলবায়ু:
      • গ্রীষ্মমন্ডলীয়
      • 20°C থেকে 30°C তাপমাত্রা
      • 1500 mm থেকে 2000 mm বৃষ্টিপাত
  • বীজ বপন:
    • সময়:
      • বর্ষার শুরু
      • শীতকালের শেষ
    • পদ্ধতি:
      • সরাসরি মাটিতে
      • বীজের মধ্যে 30 cm দূরত্ব
      • 2 cm গভীরতা
  • চারা পরিচর্যা:
    • নিয়মিত সেচ:
      • মাটি শুকনো হলে
      • সপ্তাহে 2-3 বার
    • আগাছা পরিষ্কার:
      • হাতে
      • আগাছা নিধনকারী ঔষধ
    • সার প্রয়োগ:
      • জৈব সার
      • রাসায়নিক সার
  • ফলন সংগ্রহ:
    • ফল পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হলে:

60 থেকে -৯০ দিনের মধ্য ফল দেয়

আমাদের সাথে থাকতে আরো পড়ুন :- শীতকালে সবজি চাষ

1 thought on “লাউ চাষ পদ্ধতি”

Leave a Comment

Exit mobile version