মুখী কচু চাষ পদ্ধতি

মুখী কচু চাষ পদ্ধতি

কচু

বাংলাদেশে কচু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এ দেশে কচু জাতীয় সবজির মধ্যে পানিকচু, মুখীকচু, ওলকচু, পঞ্চমুখী কচু, ঘটমান কচু, মানকচু, দুধকচু ইত্যাদির চাষ হয়ে থাকে । কচুতে ভিটামিন ‘এ’ এবং লৌহ প্রচুর পরিমাণে থাকে।

বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু কচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।পানি কচু যে সমস্ত কচু স্বল্প পানিতে চাষ করা যায় তাকে পানি কচু বলে। আমাদের দেশে পানি কচু একটি সুস্বাদু সবজি হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে কচুর চাষ করে প্রায় ২ লক্ষাধিক টন ফলন পাওয়া যায়। পানি কচু ও মুখী কচু চাষ পদ্ধতি এর মধ্যে প্রায় ৮৫% জায়গা দখল করে আছে ।

মুখী কচু চাষ পদ্ধতি

মুখী কচুর উৎপাদন প্রযুক্তি

মাটি দোআঁশ মাটি মুখী কচুর জন্য উত্তম। বর্ষাকালে পানি দাঁড়ায় না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।

মুখী কচু চাষের সময়

মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি)।

রোপণ পদ্ধতি

  • একক সারি পদ্ধতিঃ সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩৫ সেমি।
  • ডাবল সারি পদ্ধতি:  ১০ সেমি দূর দিয়ে ৬০ সেমি পর পর বীজ লাগিয়ে যেতে হয়। এতে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব ৫৫ সেমি এবং এক সারির দুই লাইনের মধ্যে দূরত্ব হয় ২০ সেমি। এই পদ্ধতিতে বীজ লাগালে ফলন প্রায় ৪০-৫০% বেড়ে যায়। দুই সারির ৩টি বীজ সমদ্বিবাহু ত্রিভূজ উৎপন্ন করবে।
  • বীজের হার: মুখীর ছড়া ৪৫০-৬০০ কেজি/হেক্টর (১৫-২০ গ্রাম ওজনের মুখী)।

 

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সম্পূর্ণ গোবর বা খামারজাত সার, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও এমওপি জমি প্রস্তুতির শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক এমওপি চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং বাকি ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে বীজ গজানোর ২০-২৫ দিন এবং ৪০-৫০ দিন এর মধ্যে পার্শ্ব প্রয়োগ পদ্ধতিতে উপরি প্রয়োগ
করতে হবে।

মুখি কচু চাষ পদ্ধতি

নিম্নলিখিত হারে সার ব্যবহার করতে হয়।

সারের নাম  কেজি/হেক্টর
গোবর         ১০,০০০
ইউরিয়া     ২৫০-৩৩০
টিএসপি    ১৫০-২০০
এমপি      ২৫০-৩৫০
জিপসাম  ১০০- ১৩০
জিংক সালফেট ১০ – ১৬
বোরিক এসিড  ১০-১২

আগাছা দমন:

মুখী কচু ৬ থেকে ৯ মাসের ফসল। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় জমিতে প্রচুর আগাছা জন্মে । মুখী কচুর পুরো উৎপাদন মৌসুমে ৪-৬ বার আগাছা দমনের প্রয়োজন হয়।আগাছানাশক ম্যাগনাম গোল্ড (Pre-emergence herbicide Magnum Gold) বীজ রোপণের পরপর বা পরের দিন প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। চারা লাগানোর দুই মাস পর হতে এক মাস অন্তর অন্তর চার বার নিড়ানী দ্বারা আগাছা দমন করতে হবে।

সেচ নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা:

মুখীকচু খরা মৌসুমে লাগানো হলে বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য তো বটেই প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে মাটির প্রকারভেদে ১০-২০ দিন পর পর সেচ দেয়া প্রয়োজন হয়। বর্ষাকালে সেচ দেওয়ার দরকার পড়ে না তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে মুখী কচুর উচ্চ ফলনের জন্য প্রয়োজনীয় সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাসময়ে গ্রহণ করতে হবে।

রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা:

পোকামাকড়, রোগবালাই এবং এর প্রতিকার

পোকামাকড়


লেদা পোকা বা প্ৰডেনিয়া ক্যাটারপিলার
পূর্ণবয়স্ক মথের পাখার বিস্তৃতি ২.৫ সেমি। পূর্ণবয়স্ক মথ গাছের পাতার নিচে গুচ্ছাকারে ডিম পাড়ে। কীড়া প্রাথমিক পর্যায়ে সবুজ বর্ণের হয় এবং মাথার রং কালো হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক কীড়া ২.৫ সেমি লম্বা হয়। প্রাথমিকভাবে এরা গুচ্ছাকারে থাকলেও পরবর্তীতে সারা মাঠে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিকার

  • লেদা পোকার ডিম নষ্ট করা এবং হাত দ্বারা কীড়া আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা ।
    এই পোকার আক্রমণ বেশিহলে ট্রেসার ৪৫ এসসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৪ মি.লি. মিশিয়ে ২০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  •  ফেরোমোন ফাঁদ পেতে পুরুষ পোকা মেরা ফেলা সম্বব। এতে করে নতুন পোকার জন্ম হতে পারে না এবং আস্তে আস্তে পোকার সংখ্যা কমে যাবে। এছাও ফেরোমন ফাঁদের সাথে বায়োপেস্টিসাইড প্রয়োগ করলে সহজে পোকা দমন করা যায়।
    আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস গ্রুপের কীটনাশক (দেবীকুইন ২৫ইসি/কিনালাক্স ২৫ইসি/ করোলাক্স ২৫ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায় ।

কচুর লাল মাকড়

  • কচুর পাতার নিচের দিকে লাল রঙের ক্ষুদ্র মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। এদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না। পূর্ণ বয়স্ক এবং নিম্ফ উভয়ই গাছের ক্ষতি করে থাকে।
    প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ মিলিহারে এবামেকটিন গ্রুপের এবং সুপার প্রয়োগ করলে লাল মাকড় দমন করা সম্ভব৷ পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক অতিরিক্ত ব্যবহারে জমিতে পরভোজী মাকড়ের সংখ্যা কমে যায় এবং ফলশ্রুতিতে ক্ষতিকারক মাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়

কচুর জাব পোকা

জাব পোকা (Aphis gossypii) রস শোষণ করে এবং ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে ফসলে ক্ষতি করে। এই পোকা পাতার রস শোষণ করে এবং ক্লোরোফিলের পরিমাণ হ্রাস করে। ফলে গাছের খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় ফলশ্রুতিতে ফলন ও কমে যায়

  • প্রতিকার হাইডাক্লোপ্রিড (এডমায়ার ১০০ এসপি) ০.৫ মি.লি. হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২৩ বার স্প্রে করতে হবে।

কচুর বিভিন্ন রোগ ও তার দমন ব্যবস্থাপনা

কচু বাংলাদেশের একটি প্রধান সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে। এছাড়া এর স্টার্চ কণা ছোট বলে শিশু খাদ্য হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যায়। কচু সাধারণত খরিফ মৌসুমে চাষ করা হয়। এটি খরিফ মৌসুমের শতকরা প্রায় ২৬ ভাগ দখল করে থাকে। বর্ষার শেষ ভাগে বাজারে সবজির ঘাটতি দেখা যায়। এ সময় কচুই সবজির ঘাটতি অনেকটা পূরণ করে থাকে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া কচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। অন্যান্য ফসলের ন্যায় কচুও নানা রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে, যার ফলে এর ফলন হ্রাস পায়। নিম্নে কচুর বিভিন্ন রোগ ও তার দমন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হল ।

পাতা ঝলসানো রোগ

কচুর রোগের মধ্যে পাতা ঝলসানো রোগ অন্যতম। পৃথিবীতে এ রোগ ট্যারো লিফ ব্লাইট (Taro Leaf Blight), ফাইটোফথোরা লিফ ব্লাইট (চযুঃড়ঢ়যঃযড়ধ ষবধভ নষরমযঃ) ইত্যাদি নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে এ রোগ প্রথম দেখা দেয় যা পরবর্তীতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ ও ওশেনিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আমাদের দেশে এ রোগ, কচুর পাতা ঝলসানো রোগ নামে পরিচিত। আক্রান্ত বীজ ও আক্রান্ত গাছের অংশবিশেষ স্থানান্তরের মাধ্যমে এ রোগ, আক্রান্ত স্থান হতে রোগমুক্ত স্থানে বিস্তার লাভ করে। এ রোগের আক্রমণে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ রোগ ফসলের পাতা, করম (ঈড়ৎস) ও অন্যান্য দেহতাত্ত্বিক অংশে হয়ে থাকে। এ রোগের আক্রমণে পাতা ও করম (Corm) পচে যায়।

এক প্রতিবেদনে দেখা যায় এ রোগের আক্রমণে মাঠে ৩০-৪০% পর্যন্ত ফলন হ্রাস পেয়ে থাকে। এমনকি সংরক্ষিত করমে এ রোগের আক্রমণে পচন দেখা যায়। ফিলিপিনে এক গবেষণায় দেখা যায়, এ রোগের আক্রমণে সহনশীল জাতগুলাতে ২৪.৪% ও রোগপ্রবণ জাতে ৩৬.৫% ক্ষতি হয়। উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, ঘন করে গাছ লাগানো এ রোগের আক্রমণকে ত্বরান্বিত করে।

এই রোগের স্পোরাঞ্জিয়া (Sporangia) অঙ্কুরিত (Germination) হওয়া ও জুস্পোর চলাচলের জন্য মুক্ত পানির প্রয়োজন। গাছের পাতা কত সময় ভেজা থাকে, তার উপরে এ জীবাণুর আক্রমণ নির্ভর করে। তাপমাত্রা ২৪-২৭° সে. এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ শতকরা প্রায় ১০০ ভাগের কাছাকাছি হলে ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে জুস্পোর স্পোরাঞ্জিয়া থেকে বের হয়ে গাছের পাতায় আক্রমণ করে থাকে। দিনের তাপমাত্রা ২৫-২৮০ সে. এবং রাতের তাপমাত্রা ২০-২২০ সে.

রোগের জীবাণু: ফাইটোফথোরা কলোকোসিয়া (চযুঃড়ঢ়ঃযড়ত্ব পড়ষড়পধংরধব) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এ ছত্রাকটির মাইসেলিয়াম বর্ণহীন, শাখাযুক্ত ও প্রস্থ প্রাচীর বিহীন (Coenocytic) |

রোগের লক্ষণ

  • আক্রান্ত পাতায় প্রথমে ছোট কাল দাগ দেখা যায় যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে হলুদ প্রান্তযুক্ত বাদামী বর্ণে পরিণত হয়। আক্রান্ত স্থানে চক্রাকার (Concentric) জোনের সৃষ্টি হয় এবং তা হতে হলুদ বর্ণের উজ (ooze) বের হয়ে আসে, যা পরবর্তীতে শুকিয়ে গাঢ় পার্পল (Purple) বর্ণ ধারণ করে
  • কিছু কিছু রোগাক্রান্ত টিস্যু সাদা বর্ণের স্পোরাঞ্জিয়া বেষ্টিত থাকে। পরবর্তীতে দাগগুলো বৃদ্ধি পায় এবং অনেকগুলো দাগ একত্রিত হয়ে (সাধারণত পাতার প্রান্ত বরাবর) পুরো পাতায় ছড়িয়ে যায়। আক্রান্ত পাতায় অনিয়মিত আকার ও আকৃতির দাগ দেখা যায়
  • দাগগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে একত্রিত হয়ে সমস্ত করম পচে যায় ।

রোগ দমন ব্যবস্থাপনা

  •  গাছের রোগাক্রান্ত পাতা ছেটে ফেলা এবং ফসল সংগ্রহের পর জমিতে পড়ে থাকা করম ও পাতা ধ্বংস করতে হবে।

জমিতে রোগ দেখা মাত্রই ছত্রাকনাশক যেমন সিকিউর / ডাইথেন এম-৪৫ নামক ছত্রাকনাশক ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়।পাতায় দাগ পড়া বা লিফ স্পট রোগএটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ । বাংলদেশে কচুর জমিতে সাধারনত এ রোগ সহজেই চোখে পড়ে।

রোগের জীবাণু: কোলেটোট্রিকাম (Colletotrichum) গনের অর্ন্তভুক্ত কোলেটোট্রিকাম ক্যাপসিসি (Colletotrichum capsici)/কোলেটোট্রিকাম লিন্ডেমুথিয়ানাম (Colletotrichum lindemuthianum) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে ।

রোগের লক্ষণ

  •  এ রোগের আক্রমণে কচু পাতায় শুকনো ছোট ও মাঝারী আকারের দাগ পড়ে
  •  আক্রমণ বেশি হলে ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

রোগ দমন ব্যবস্থাপনা

  • রোগমুক্ত সুস্থ সবল চারা সংগ্রহ করা ।
    কচুর জমিতে এ রোগ দেখা গেলে টিল্ট নামক ছত্রাক নাশক (০.৫ মিলি/লিটার) ২৩ বার স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায় ৷
  • পরিষ্কার চাষাবাদ ও শস্যপর্যায় অবলম্বন করে এ রোগ কমানো যাবে।
    গোড়া পচা রোগ বা ফুট/কলার রট
    স্ক্লেরোশিয়াম রফসি (ঝপষবড়ঃরঁস ড়ষভংরর) নামক এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে ।

রোগের লক্ষণ

  • এ রোগের আক্রমণে গাছের গোড়ায় সাদা বর্ণের মাইসোলিয়াম দেখা যায়। ভাল করে তাকালে কালচে বাদামী বোর সরিষার দানার মত স্ক্লেরোশিয়া গঠন দৃষ্টিগোচর হয়।
  • আক্রান্ত গাছটি সম্পূর্ণ রূপে হলুদ হয়ে যায় এবং সবশেষে গাছটি কলার(Collar) অঞ্চল হতে ঢলে পড়ে
  • রোগের মারাত্মক আক্রমণে, মাটির নিচের করম (ঈড়ৎস)
    ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও পুরো গাছ ঢলে পড়ে।

রোগ দমন ব্যবস্থাপনা

  • রোগমুক্তএলাকা হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
  • ক্ষেতের পানি সরিয়ে বেভিস্টিন (১ গ্রাম/লিটার) নামক ছত্রাক নাশক দিয়ে ফসলের গোড়ার মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। তবে ভিজিয়ে দেয়ার ১ দিন পর আবার পানি দেয়া যাবে।
  • পরিষ্কার চাষাবাদ ও শস্য পার্শ্ব অবলম্বন করে এ রোগ কমানো যাবে।রাইজম পচা / করম রট
    পিথিয়াম আফানিডারমাটাম (Pythium aphanidermatum) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে ।

রোগ দমন ব্যবস্থাপনা

  • রোগমুক্ত এলাকা হতে চারা/ করম সংগ্রহ করে লাগাতে হবে ।
  •  পক্ষিার চাষাবাদ, শস্যাবর্তন অনুসরণ করতে হবে।
  • ফসল কর্তনের পর, ফসলের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করতে হবে ।
  • জমির পানি সরিয়ে রিডোমিল গোল্ড (২ গ্রাম/লিটার) নামক ছত্রাক নাশক দিয়ে ফসলের গোড়ার মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। তবে ভিজিয়ে দেয়ার ১ দিন পর আবার পানি দেয়া যাবে।

বি.দ্র.- কচুপাতায় ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ছিটানোর সময় ডিটারজেন্ট যেমন- সার্ফ অথবা হুইল পাউডার ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তা না হলে ছিটানো ঔষুধ পাতা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাবে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
গাছের গোড়ায় মাটি তোলা: রোপণের ৪০-৪৫ দিন পর এবং ৯০-১০০ দিন পর দুই সারির মাঝের মাটি কুপিয়ে
ঝুরঝুরে করে কচু গাছের গোড়ায় উঠিয়ে দিতে হবে।


ফসল সংগ্রহ: বীজ রোপণের ছয় মাস পর আগাম ফসল সেপ্টেম্বর (মধ্য-ভাদ্র) মাস থেকে মুখী সংগ্রহের উপযোগী হয় এবং ঐ সময় গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে মারা যায়।

ফলন: উচ্চ ফলনশীল বিলাসী জাতে গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৩০-৩৫ টন। মোট ফলনের ৭৫- ৮৫% মুখী (Corm) এবং বাকিটা গুঁড়িকন্দ (Cormel)।

ওল কচু চাষ পদ্ধতি

ওল কচুর উৎপাদন প্রযুক্তি
জমি নির্বাচন ও তৈরি

সু-নিষ্কাশিত এঁটেল দো-আঁশ,বেলে দো-আঁশ মাটি উপযোগী। অতিরিক্ত এঁটেল ও বেলে মাটিতে চাষ না করাই ভাল ।মাটির প্রকারভেদে ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে ভাল করে মই দিয়ে মাটি চেপে দিতে হবে।

বীজ তৈরি :সাধারণত বিভিন্ন আকারের মুখী এক/দুই বছর আবাদ করার পর যে গুঁড়িকন্দ তৈরি হয় তাই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ছোট আকারের গুঁড়ি কন্দগুলিকে এক বছর রোপণ করে বীজ
তৈরি করতে হয়।

বীজ বপনের সময়: মধ্য -মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি) মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে মধ্য-চৈত্র
থেকে মধ্য-বৈশাখ (এপ্রিল) মাসেও লাগানো যায় তবে এরপরে রোপণ করলে ফলন কমে যায় ৷

বীজ বপণের দূরত্ব: অন্যান্য ফসলের মত ওলকচুর জন্য কোন একক দূরত্ব নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। বীজের আকারের অসমতার জন্য বিভিন্ন আকারের বীজ বিভিন্ন দূরত্বে বপণ করতে হবে।
স্বাভাবিক ও বাণিজ্যিক উৎপদনের জন্য বীজ বপনের দূরত্ব
বীজের আকার (গ্রাম)
স্বাভাবিক
২০০-৪০০
বপণ দূরত্ব (সেমি)
স্বাভাবিক
৫০ সেমি x ৪০ সেমি
বানিজ্যিক ৬০ সেমি x ৫০ সেমি

বীজ বপনের পদ্ধতি

গর্তের আকার বীজের ব্যাসের চেয়ে একটু বড় হবে। গভীরতা হবে ব্যাসের তিন গুণ। তবে কন্দের ভিন্নতার উপর গত্রের আকার আকৃতি ভিন্ন হয়।
সার প্রয়োগ

আশানুরূপ ফলন পেতে হলে নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম  সারের পরিমাণ/ হেক্টর
গোবর       ২০ টন/২০০০ কেজি
ইউরিয়া    ৩২৫ কেজি
টিএসপি   ২১০ কেজি
এমপি     ১৭৫ কেজি

সম্পূর্ণ গোবর এবং ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সারের অর্ধেক জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক বীজ বপনের গর্তে বা লাইনে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সমান বা ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের ৮০-৮৫ দিন পর ভালভাবে আগাছা পরিষ্কার করে প্রথমবার এবং ১১০-১১৫ দিন পর দ্বিতীয়বার প্রয়োগ করতে হবে।

কীট পতঙ্গ ও রোগ বালাইয়ের প্রতিকার

ওলকচুর ক্ষেত্রে কীট পতঙ্গ ও রোগ বালাইয়ের তেমন কোন সমস্যা নেই । তবে মাঝে মাঝে লিফ বাইট (পাতা ও ডগা পচা রোগ), কলার রট প্রভৃতি রোগ দেখা দেয়।

লিফ বাইট

এ রোগে পাতা বেশি আক্রান্ত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে কাণ্ডতে ও লিফ বাইট রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এ রোগের প্রতিকারের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম ডায়থেন এম-৪৫ বা রিডোমিল এম জেড বা এক্রোবেট এম জেড ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পর পর ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ

একটি কন্দ থেকে ২-৪ টি পর্যন্ত ভূয়া কাণ্ড বের হতে দেখা যায়। একটি নতুন ভূয়া কাণ্ড বের হওয়ার পর পুরানটি মারা যায়। ক্ষেতে যখন শতকরা ৮০ ভাগ গাছ হলুদ হয়ে যায় তখন ফসল পরিপক্ক হবে এবং তখন থেকে ফসল সংগ্রহ করা যাবে। বীজের জন্য ক্ষেতের গাছ সম্পূর্ণ রূপে শুকিয়ে মারা যাওয়ার পর সংগ্রহ করতে হবে। বাজার মূল্য এবং বাজারের চাহিদা মোতাবেক ঠিকমতো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে সংগ্রহ করতে হবে। অপরিপক্ক ওলও সংগ্রহ করা যেতে পারে।

 

বীজ সংরক্ষণ

বীজ যে জমিতে থাকে যদি অন্য কাজে প্রয়োজন না হয় তবে জমিতেই রেখে দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পূর্বে বীজ উঠিয়ে পুণরায় রোপণ করতে
হবে।

পানি কচু চাষ পদ্ধতি

মাটি

পলি দোআঁশ ও এঁটেল মাটি পানি কচু চাষের উপযোগী।
রোপণের সময়

আগাম ফসলের জন্য কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) ও নাবী ফসলের জন্য মধ্য-ফাল্গুন থেকে মধ্য- বৈশাখ (মার্চ-এপ্রিল) মাসে লাগানো যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য অগ্রহায়ণ-পৌষ মাস (ডিসেম্বর থেকে মধ্য- জানুয়ারি) চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

রোপণ পদ্ধতি

কচু চাষে প্রয়োজন প্রতি হেক্টরে ৩৭-৩৮ হাজার চারা ।
বীজ রোপণের দূরত্ব: উন্নত জাতের কচুর জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব
৪৫ সেমি রাখতে হবে।

সারের পরিমাণ

সারের নাম    কেজি/হেক্টর
গোবর      ১০,০০০-১৫,০০০
ইউরিয়া     ৩০০ -৩৫০
টিএসপি৷   ১৫০-২০০
এমপি      ২৫০-৩৫০
জিপসাম   ১০০-১৩০
জিংক সালফেট ১০-১৬
বোরিক এসিড   ১০-১২
এলাকাভেদে প্রয়োজন হয়

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১.৫-২ মাস সময়ে অর্ধেক এমওপি
এবং ইউরিয়ার এক ষষ্ঠাংশ ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি পাঁচ ভাগ ইউরিয়া সার সমান কিস্তিতে ১৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

পানি কচুর গোড়ায় দাঁড়ানো পানির গভীরতা ৮-১০ সেমি এর বেশি হলে ফলন কমে যায় এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে হবে। বর্ষাকালে জমি থেকে ৮-১০ সেমি এর বেশি পানি সরিয়ে ফেলতে হবে।

পানি কচু চাষ বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় ও লাভজনক কৃষি কাজ। এর সুস্বাদু গুণ এবং পুষ্টিগুণের কারণে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই নিবন্ধে আমরা পানি কচু চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব।

জমি প্রস্তুতি

  • মাটি: পানি কচু চাষের জন্য পলি দো-আঁশ বা এঁটেল মাটি উপযোগী।
  • জমির নির্বাচন: মাঝারি নিচু থেকে উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি সহজেই ধরে রাখা যায়, সেই জমি পানি কচু চাষের জন্য উপযুক্ত।
  • জমি তৈরি: জমি ভালোভাবে চাষ করে লেভেল করে নিতে হবে। জমিতে গোবর সার, টিএসপি, এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

চারা রোপণ

  • চারা নির্বাচন: রোগ-পোকা মুক্ত, সতেজ এবং ৪-৬টি পাতাবিশিষ্ট চারা বেছে নিতে হবে।
  • রোপণের সময়: আগাম ফসলের জন্য কার্তিক এবং নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ মাসে কচু লাগানো যায়।
  • রোপণের দূরত্ব: সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪৫ সেমি রাখতে হবে।
  • রোপণ পদ্ধতি: চারা রোপণের সময় উপরের ২/১ টি পাতা বাদ দিয়ে বাকি সব পাতা ও পুরানো শিকড় কেঁটে ফেলতে হবে। তারপর মাটি থকথকে কাদাময় করে তৈরির পর নির্ধারিত দূরত্বে ৫-৬ সেমি গভীর চারা রোপণ করতে হবে।

সার প্রয়োগ

সারের পরিমাণ

হেক্টরপ্রতি ১০ টন গোবর, ৩০০ কেজি ইউরিয়া, ১৫০ কেজি টিএসপি, ২৫০ কেজি এমওপি ও ১০০ কেজি জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার প্রয়োগের পদ্ধতি

  • ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি সার বাদে বাকি সমস্ত সার জমি তৈরির শেষ চাষে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১.৫-২ মাস সময়ে অর্ধেক এমওপি এবং ইউরিয়ার এক ষষ্ঠাংশ ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি পাঁচ ভাগ ইউরিয়া সার সমান কিস্তিতে ১৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ

  • পানি: পানি কচুর গোড়ায় সবসময় দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে।
  • সেচ: দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে হবে।

রোগবালাই দমন

  • রোগ: পাতার উপর বেগুনি থেকে বাদামি রঙের গোলাকার দাগ পড়ে, পরবর্তীতে এ দাগ আকারে বেড়ে একত্রিত হয়ে যায় এবং পাতা ঝলসে যায়।
  • দমন: প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রিডোমিল এমজেড-৭২ ডব্লিউ অথবা ডাইথেন এম ৪৫ মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার দিতে হবে।

আহরণ

  • সময়: রোপণের ৪-৫ মাস পর কচু আহরণ করা যায়।
  • পদ্ধতি: মাটি খুঁড়ে কচু বের করে নিতে হবে।

রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন: মুখী কচুর অনুরুপ

আরো পড়ুন:-শাক সবজি চাষ পদ্ধতি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংক:-https://www.facebook.com/infoseba.2024/

Leave a Comment

Exit mobile version