হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি বাংলাদেশের  একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ও নগদ ফসল। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাত ব্যবহার করে ভুট্টা চাষ লাভজনক হতে পারে।

এই আর্টিকেলে, আমরা হাইব্রিড ভুট্টা চাষের একটি ধাপে ধাপে পদ্ধতি আলোচনা করবো যা আপনাকে উচ্চ ফলন অর্জনে সাহায্য করবে।

ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি:

* ভুট্টা চাষের জন্য ভালো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পন্ন উর্বর, দোঁয়াশ মাটি উপযুক্ত।

* জমি ভালো করে চাষ দিয়ে তৈরি করতে হবে।

* জৈব সার যেমন গবীর সার, কম্পোস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বাড়ানো যেতে পারে।

হাইব্রিড ভুট্টার জাত

* বাজারে বিভিন্ন ধরণের উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ভুট্টার জাত পাওয়া যায়।

পেট্রোকমঃ

পায়োনিয়ার-৩৩৫৫ বিঘা প্রতি ফলন: ৪২-৪৫ মন)

পায়োনিয়র-৩৩৭৬ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

রাফিদ সীডসঃ

বিজয়-৭১ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)

মহান-২১(বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

পদ্মা-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)

রাসেল সীডসঃ

সম্রাট (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

তিস্তা সীডসঃ

ডালিয়া-৪৪৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪১ মন)

সিভাম-২৩৯ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

জামাল সীডসঃ

মন্ডল- ৩৫ বি ৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৩ মন)

পারফেক্ট ৩০ বি ৫১ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪২-৪৫ মন)

ব্রাদার্স সীডসঃ

রূপসী বাংলা-৬৬৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)

বিজোতা সীডসঃ

বিরাট-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

ব্রাক সীডসঃ

যুবরাজ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)

আলফা সীডসঃ

রকেট-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

ব্যবিলনঃ

সুপার-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)

বাজিমাত (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

বায়ারঃ

ডিকাল্ব ৯২১৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৩৮-৪০ মন)

ডিকাল্ব- ৯১৬৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)

ইস্পাহানিঃ

লাকী-৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)

এসিআইঃ

ডন-১১১ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

ডিসকোভার-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)

ডিসকোভার-৭৭৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪১ মন)

অটো ক্রপ কেয়ারঃ

আলাস্কা (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)

ফ্যালকন (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

ইউনাইটেডঃ

ইউরেকা (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

ইউনাইটেড-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২মন)

লালতীরঃ

টারজান-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪৫-৪৬ মন

PAC-339 (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

GT-822 (বিঘা প্রতি ফলন: ৪২-৪৫)

সুলতান (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৩ মন)

নাবা সীডসঃ

নাবা-৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

থ্রি এসএগ্রোঃ

দূর্জয়-৫৫৭৭ (বিঘা প্রতি ফলন: ৩৮-৪০ মন)

তান্ডব (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)

সরকার এগ্রোঃ

সম্পদ-৯১৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪৫ মন)

দেশ জেনেটিকঃ

জয়-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

ফজলু সীডঃ

ফাইজা-৫৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০-৪২ মন)

ফাতেমা-২৫৫ (বিঘা প্রতি ফলন: ৪০ মন)

বীজহার/বীজের পরিমাণ:

হেক্টর: ২১ কেজি (২৪৭ শতকে)

বিঘায়: ২.৮ কেজি (৩৩ শতকে)

শতকে: ৮৫ গ্রাম

বীজ শোধনঃ

ভূট্টার ফল আর্মি ওয়ার্ম পোকা দমনে ফরটেনজা প্রতি কেজি ভূট্টার বীজে ২.৫০ মিলি হারে সাথে ১০ মিলি পানি দিয়ে বীজ

মিশিয়ে নিবেন। বীজ শোধনের ৮-১২ ঘন্টা পরে বীজ রোপন করা উত্তম।

ই রবি মৌসুমে কম খরচে অধিক মুনাফার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইস্পাহানি এগ্রো নিয়ে এলো হাইব্রিড ভুট্টা বীজ- লাকি-৭, অরেঞ্জ গোল্ড, উইনার-৭০ ও কোহিনুর ১৮২০।

আকর্ষণীয় কমলা বর্ণের পুষ্ট দানা নিশ্চিত করে সর্বোচ্চ বাজারদর।

পরিপক্ব দানায় আদ্রতা খুবই কম থাকায় শুকানোর ঝামেলাও কম।

মজবুত শেকড় ও কান্ড এবং অধিক প্রতিরোধী জাত হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম।

জাত ভেদে একর প্রতি ফলন হবে ১৬০-১৭০ মন ।

 

এছাড়াও ইস্পাহানি এগ্রোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আর্দ্রতা , তাপমাত্রা ও জীবাণুমুক্ত সংরক্ষণাগার ও বীজ স্বাস্থ্য পরীক্ষাগার বীজের সর্বোচ্চ গুনগত মান নিশ্চিত করে সবসময়।

* আপনার এলাকার আবহাওয়া ও মাটির ধরনের জন্য উপযুক্ত জাত নির্বাচন করুন।

* বীজ কোম্পানি থেকে উন্নত মানের বীজ ক্রয় করুন।

ভুট্টা চাষের উপযুক্ত সময়

বাংলাদেশে রবি মৌসুমে মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারী- মার্চ) পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

* লাইন পদ্ধতিতে বীজ বপন করা ভালো।

* লাইনের মধ্যে দূরত্ব 70-80 সেমি এবং গাছের মধ্যে দূরত্ব 20-25 সেমি রাখা উচিত।

* বীজ বপনের পর হালকা সেচ দিতে হবে।

বীজ বপনঃ


ভুট্টা বীজ সারিতে বুনতে হয়৷ সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেন্টিমিটার বা ২৪ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি

বীজের গভীরতাঃ
ভূট্টার বীজ ২-৩ সে: মি: গভীরতায় রোপন করতে হবে।

বীজ রোপন পদ্ধতিঃ
সারিতে রশি টেনে হাত দিয়ে বীজ রোপন করলে সর্বোচ্চ সংখ্যক চারা গজায় এতে বীজ গজাতে মাটির ঢেলা বাধা গ্রস্ত হয় না।

ভুট্টা চাষে সারের পরিমাণ

সার ব্যবস্থাপনাঃ
ভুট্টা গাছের পুষ্টি চাহিদা অনেক বেশি৷ এজন্য অধিক ফলন পেতে হলে ভুট্টা জমিতে সুষম সার দিতে হয়৷

সারের পরিমাণ শতকে

১/ ইউরিয়া ২.৩০ কেজি
২/ টিএসপি ১.৪০ কেজি
৩/ এমপি ১ কেজি
৪/ জিপসাম ৮০০ গ্রাম
৫/ জিংক সালফেট ৪৮ গ্রাম
৬/ বোরন ৪০ গ্রাম
৭/ ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ২০০ গ্রাম
জমির ধরন অনুযায়ী কম/বেশি হতে পারে
৮/ গোবর ৪০ কেজি

সারের পরিমাণ (বিঘা প্রতি = ৩৩ শতকে)

১/ ইউরিয়া ৭৬ কেজি
২/ টিএসপি ৪৬ কেজি
৩/ এমওপি ৩৩ কেজি
৪/ জিপসাম ২৬.৪ কেজি
৫/ জিংক সালফেট ১.৫০ কেজি
৬/ বোরন ১.৩০ কেজি
৭/ ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ৬.৬০ কেজি
৮/ গোবর ১৩২০ কেজি

#টিএসপি সারের পরির্বতে ডিএপি সার ব্যবহার করলে ৪০% ইউরিয়া সার কম প্রয়োগ করতে হবে।

ভুট্টা চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া এবং অন্যান্য সারের সবটুকু জমি তৈরির শেষ চাষের আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া দুই কিস্তিতে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে

#প্রথম কিস্তি ইউরিয়া সার ৮-১০ পাতা পর্যায়ে
#দ্বিতীয় কিস্তি ইউরিয়া সার ৮০-৮৫ দিনে। পুরুষ ফুল ফোটা পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে

আগাছাঃ
ভূট্টার জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে ভালো। তবে বীজ বপনের ৩০-৪০ দিন পর্যন্ত ভূট্টা ক্ষেত অবশ্যই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপনাঃ
#প্রথম সেচঃ
বীজ বপনের ২০- ২৫ দিনের মধ্যে (৩-৫ পাতা পর্যায়ে)

#দ্বিতীয় সেচঃ
বীজ বপনের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে (৮-১০ পাতা পর্যায়ে)

#তৃতীয় সেচঃ
বীজ বপনের ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে (পুরুষ ফুল আসার সময়)

#চতুর্থ সেচঃ
বীজ বপনের ১০০-১১০ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার পর্যায়ে) সেচ দিতে হবে৷

ভুট্টা চাষে পোকামাকড়

#কাটুই পোকাঃ চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণ করে থাকে- (ক্লোরোপাইরিফস+সাইপারমেথ্রিন) গ্রুপের কীটনাশক নাইট্রো৫০৫ ইসি/সেতারা ৫৫ ইসি/ক্লোরোসাইরিন৫৫ ইসি/এসিমিক্স ৫৫ ইসি যে কোন একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি হারে মিশিয়ে সন্ধ্যায় স্প্রে করে দিবেন।

ফল আর্মি ওয়ার্ম পোকাঃ
কুশির ভিতরে পাতা খেয়ে মল ত্যাগ করে থাকে এ পোকা- ফউলিজেন/সাকসেস/বায়ো স্পিনোসেড/বায়ো বিটিকে/ যে কোন একটি কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন।

রোগঃ
#পাতা ঝলসানো রোগ:
পাতা ঝলসে বা পুড়ে যাওয়ার মত হলে প্রপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক টিল্ট/প্রোটেন্ট/প্রাউড/সাদিদ যে কোন একটি বালাইনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করে দিবেন।

ফিউজেরিয়াম স্টক রট:
কান্ডের ভিতরে বা গোড়ায় শিকড়ে কালো দাগ পড়ে এমন হলে বিঘা প্রতি ১০-১৫ কেজি পটাশ সার দিবেন এবং কার্বেন্ডাজিম স্প্রে করে দিবেন

ভুট্টা সংগ্রহ:-

দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছাড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্র্রহ করতে হবে

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
#ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোনো ক্রমেই যেন পানির স্বল্পতা এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়।

আরও পড়ুন :-কৃষি কাজে বিজ্ঞান

Leave a Comment

Exit mobile version